বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৫

টিভি কেনার গল্প (শৈশব)


রম্য :

১. রস আলো :প্র.আ  ২. প্যাচাল ৩.  রকমারি রম্য : বা-প্র  ৪.   ৫.

ম্যাগাজিন




তখন ছোট। আমাদের বাসা আর নানা-নানুর বাসা পাশাপাশি। নানুর বাসায় বিটিভিতে রাত আটটার সংবাদ খুব মনযোগ দিয়ে দেখতাম। না খবরগুলো না। খেলার খবর। সেটা দেখার জন্যই বসে থাকতাম। যদি হুট করে খেলার খবর চলে যায়! তাই পুরাটা সময় বসে থাকা। খেলার খবর পাওয়ার ওইটাই ছিল ভরসা। সপ্তাহে একদিন মঙ্গলবার বিটিভিতে রাতে নাটক হতো। রাত আটটার সংবাদের পর।


সে নাটক দেখার জন্য সপ্তাহ জুড়ে অপেক্ষা। আমাদের পাড়ায় তখন এখনের মত এত বিল্ডিং ছিল না, মানুষ ছিল না। এখন তো বাসায় বাসায় পানির লাইন। তখন মাত্র কয়েকজনের বাসায় পানির লাইন ছিল। আর একটা লাইন ছিল সরকারি। যাদের বাসায় পানির লাইন ছিল না তারা সেখান থেকে পানি নিতো।

সেটার কোন ট্যাপ ছিল না বন্ধ করার। পানি আসলে অনবরত পানি পড়তে থাকতো। সবাই ফ্রি-তে পানি নিতে পারতো। দেখা যেত পানি আসার আগেই আশে পাশে বিশাল কলসির হাট বসেছে। কে আগে রেখেছে এটা নিয়ে প্রায় সময়ই ঝগড়া লেগে যেতো। মহিলারা ঝগড়া করতো। চুলাচুলির ঘটনাও ঘটে যেতো। একজনের কলসি অন্যজন ফেলে দিতো। চিল্লাচিল্লি কানে আসতো। খিস্তি খেউরও শোনা যেতো!
আচ্ছা টিভির কথা প্রথমে যা বলছিলাম। নানুর বাসায় টিভি কেনার ক্ষেত্রে একটা গল্প ছিল।

তখন পুরা পাড়ায় একটা মাত্র টেলিভিশন। সে বাসায় আমরা আগ্রহ নিয়ে টিভি দেখতে যেতাম। একদিনের ঘটনা। খালামনিও গেছে। আমরা টিভির কি যেন একটা অনুষ্ঠান দেখছিলাম। হঠাৎ করে বলা নাই কওয়া নেই ওই পরিবারে মশারি টাঙ্গিয়ে দেয়া হলো। টিভির অবস্থানটা এমন যে মশারি টাঙ্গালে আর টিভি দেখা যায় না।
ব্যাপারটায় বেশ অপমানিত হলাম। না, আমি ছোট। অপমানের ধার বুঝি না। বাসায় আসার পর দেখি খালামনিরা আর মামা কথা বলছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর অন্যের বাসায় টিভি দেখতে যাবেন না। একটা জেদ! মধ্যবিত্ত মানুষের জেদগুলো ভয়াবহ হয়! সেগুলো কেউ ভাঙ্গাতে পারে না।

এখন বান্দরবানে অনেক গুলো কোম্পানির শো রুম আছে। টিভি ফ্রিজ এখান থেকেই কেনা যায়। তখন টিভি ফ্রিজ বান্দরবানে কেনা যেতো না। কিনতে হলে যেতে হতো চট্টগ্রামে। তাও অনেক দূর। যাওয়ার ব্যবস্থাও এখনের মত উন্নত ছিল না।

টিভির অনেক দাম। এত টাকা হুট করে যোগাড় করাটাও কঠিন। কিভাবে সম্ভব। জমানো টাকা এদিক ওদিক থেকে কষ্ট করে যোগাড় হয়ে গেলো। মামা আর নানা শহরে গেলেন। বিকেলে দেখি বিশাল এক বাকসো নিয়ে তারা আসছেন। আমাদের খুশী কে দেখে!! আমরা লাফাচ্ছি। প্যানাভিশন টিভি! দাম ১৬ হাজার টাকা দাম। রঙ্গিন টিভি।

তখন এন্টেনা ছাড়া আসলে বিটিভি দেখা যেতো না। লম্বা বাঁশ লাগতো। সে বাঁশের মাথায় এন্টেনার লাগিয়ে দিতে হতো। আবার লাগালেই হতো না। নির্দিষ্ট দিকেই শুধু ভালো দেখাতো। নাহলে ঝির ঝির করতো।

তা এন্টেনার লাগানো হলো। টিভি চলা শুরু করলো। মাঝে মাঝে ঝির ঝির করে। আমরা এন্টেনারের বাঁশ ঘোরাতে যাই। বাঁশটা ঘোরানো যথেষ্ট কষ্টের কাজ। একজনে পারা যায় না। তাই দুইজনে ধরি। আর একটু পর পর জিজ্ঞেস করি আসছে? আসছে?
ভেতর থেকে জবাব আসে কখনো কখনো, আরে আরো খারাপ হয়ে গেছে। এখন তো কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কোন দিকে নাড়াচ্ছিস!

: এবার?
: না।
: এবার?
: না। উল্টাদিকে নাড়া।
আমরা আরেকটু নাড়িয়ে চিল্লাই, এবার?
: হা আসছে, আসছে। আর নাড়ানোর দরকার নেই। ওভাবেই থাক।

ফেসবুকে : টিভি কেনার গল্প