যারা আমার মত অর্ধ অন্ধ তারা বুঝে চশমার প্রয়োজনীয়তা কি! ভাল চোখওয়ালা কারো পক্ষে চশমার এত প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। অষ্টম শ্রেণীতে পড়বার সময় চোখ দেখাতে গিয়েছিলাম। সমস্যা পিছনের সিটে বসলে ব্ল্যাক বোর্ডের লেখা কম দেখি। আমি মনে করতাম সবাই আমার মত কম দেখে!! এই ভুল ধারণার কারণে ডাক্তার দেখাতে দেরি হয়ে গিয়েছিল।
আরো আগে দেখাইলে এক দিকে লাভ হইত। বেঁচে যেত ৫০ টাকা। কেননা এই ডাক্তারের ফি পূর্বে বর্তমানের চেয়ে ৫০ টাকা কম ছিল। আগে দেখালে ওই ৫০ টাকা কম লাগত।
তো ডাক্তারের কাছে গেলাম এক শনিবার। ডাক্তার শহর থেকে আসেন। প্রতি সপ্তাহে একবার মাত্র। সামনে থাকা বিভিন্ন অক্ষর পড়তে দিলেন। একটা অদ্ভূত আকারের ভারী চশমা চোখের উপর বসিয়ে দিলেন। একটু পর পর কাঁচ পরিবর্তন করে করে দেখতে লাগলেন আমার চোখের জন্য কোন পাওয়ার ভালো হয়। পরিশেষে নির্ধারিত হয়ে গেল। চশমা প্রেসক্রাইবের সাথে কিছু ওষুধ ও দিলেন।
সে থেকে আমি চশমা পরিহত। সময়ের ব্যবধানে বয়স বেড়েছে অনেক। বয়সের সাথে বেড়েছে চশমার গ্লাসের পুরুত্ব।
এই চশমা ব্যবহারের কারণে বেশ কিছু যন্ত্রণার মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রথম দিকে অনেকে মনে করিত স্টাইলের জন্য চশমা ব্যবহার করছি। কলেজে পড়ার সময় এক ম্যাডাম চশমু বলে ডাকত, এই চশমু বলোতো এটা কি হবে, চশমু এদিকে এসো। তার দেখাদেখি আরো কয়েকজন এই নামেই আমারে ডাকা শুরু করে। আকিকাকৃত নামটি হারানোর দশা তখন।
ভাগ্য ভাল দুই বছরের কলেজ জীবন শেষ হয়ে যায়। আর কিছু দিন থাকলে আমার পিতৃ প্রদত্ত নাম হয়ত আমি নিজেই ভুলে বসিতাম। এখনও চশমা পড়ি দেখে অনেকে কানা বলে আমাকে সম্বোধন করে।
কেউবা ডাকে চারচোখ, কেউ বলে চোখে মালা দিয়েছি। কানা বাবা বলেও ডাকে কেউ কেউ। এই কষ্ট গুলো কই রাখি।
চশমা ভাঙবার রেকর্ডও অনেক গুলো ইতিমধ্যে হইয়া গেছে। শুয়ে শুয়ে গল্প বই পড়ছি হঠাৎ ঘুম চলে আসছে, সকালে উঠে দেখি আমার চশমা আমার শরীরের চাপে আহত হয়ে পড়ে আছে। কি কষ্ট কি কষ্ট। এই ধরণের ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটল।
চশমাকে আমার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে মনে হয়। তা বুঝলাম নামাজের জন্য অজু করার সময় চশমার ওপর দিয়ে মুখে পানির ঝাপটা দিতে গিয়ে। পরে হাতের আঙুলের স্পর্শে টের পাই। চশমা খুলি। এই ভুলটা দেড় ডজনের বেশি ঘটল।
রাতে চশমা রাখা নিয়ে আরো বিপদ। এখন ভালো বুদ্ধি পেয়েছি। ঘুমানোর আগে চশমাটা খাটের নিচে মেঝেতে রেখে দিই। অক্ষত অবস্থায় তা সেখানে থাকে। চশমার জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারায় আমি যারপরনাই আনন্দিত। আমার চশমা এখন নিরাপদে থাকে।
আমার কাজিন এক বড় বোনের খুব শখ জাগল চশমা নেবে। সে চোখের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলায় তাকে ডাক্তারের কাছে নেওয়া হলো। ডাক্তার অক্ষর পড়তে দিলেন। সে ইচ্ছা করে ভুল করল। ডাক্তার গম্ভীর মুখে টেবিলে ফিরে গেলেন। আপু মহাখুশী। চশমা পাবেন নিশ্চয়।
ক্লাসে যারা চশমা পড়েন তাহাদের অনেক জ্ঞানী লাগে, তাকেও নিশ্চয় জ্ঞানী মনে হবে। চশমা পাওয়ার আশায় তিনি উত্তেজিত। একটু পর ডাক্তার টর্চ লাইট আকৃতির একটি যন্ত্র দিয়ে তাহার চোখ পরীক্ষা করে তার দুরভিসন্ধি ধরিয়া ফেললেন। এতে আপুর যে কি দু:খ!!
চশমা পড়ায় কেউ কেউ মনে করে অনেক জ্ঞানী। আমি গাধাকে জ্ঞানী ভাবার পুরা অবদান আমার চশমার। আমার চশমাটি আমার অনেক প্রিয়। আমি আমার চশমাকে অনেক ভালবাসি।
কাঁচা হাতের গল্পে : চশমা
কাঁচা হাতের গল্পে : চশমা