শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৫

কলেজে ৭ অক্টোবর-১০ (দিনপঞ্জি)

বৃষ্টিতে সকালটা অনেক মায়াবী লাগছিল। ঝুম ঝুম একাধারে বৃষ্টি। অদ্ভূত সুন্দর। এরকম বৃষ্টির দিনে কাথামুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকার অন্যরকম মজা।

সকালে ক্লাস আসে। পার্সেন্টিক কম। তাই অনিচ্ছাস্বত্বেও বের হলাম প্যান্টের নিচের দিকটা গুটিয়ে। আহাদ যেতে চাচ্ছিলো না। আরেকটু ঘুমাবে। জোর করে ওকে রাজি করালাম।


তা দুই বন্ধু মিলে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছুটলাম কলেজের পানে। সেমিনারে গিয়ে দেখি চার পাঁচ আড্ডা দিচ্ছে। ওদের সাথে যোগ দিলাম। হঠাৎ একজন জানারো আজ নাকি ক্লাস হবে না। কই কি? এত কষ্ট করে ক্লাসে আসলাম। আর ক্লাস হবে না। ইহা কি মানা যায়?

মন খারাপ করে বসে আছি। যে মেয়ে ক্লাস হবে না তথ্যটা দিলো সে বলল, আচ্ছা ক্লাসে কোন কোন মেয়ে আছে। সেখান থেকে ঘুরে আসা একজন জানালো অনেকে আসছে। ঠিক আছে আমি দেখে আসি বলে মেয়েটি বিদায় জানালো।

কথা বলছি। যদিও কথায় জীবন নাই। কেননা ক্লাস হবে না শুনে অনেক খানি শকড। এর চেয়ে আরো কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেওয়া কত্ত ভাল ছিল।

হঠাৎ দেখি একজন ডাকতে এসেছে। স্যার নাকি ক্লাসে। ডাকছেন সবাইকে। খুশী হয়ে গেলাম। ক্লাসে ঢুকে দেখি স্যার ক্রীম কালারে পাঞ্জাবী পড়ে এসেছেন। স্যারকে সহজে পাঞ্জাবী পড়ে ক্লাসে আসতে দেখি না। কাহিনী কি? সবার কৌতুহল। স্যার নিজেই ফাঁস করে দিলেন ব্যাপারটা। আজ কলেজে ঈদ পুনর্মিলনী। তাই এই ড্রেসে।

আরে বলে কি? পুণর্মিলনী অথচ আমরা কিছুই জানি না। হুম ক্লাসে বৃষ্টির কারণে খুব কম উপস্থিত ছিল। ছেলের সংখ্যা ১০ জন। মেয়ের সংখ্যা ১৫ জন। এদের মধ্যে দুই একজন ছাড়া কেউই জানে না আজকের ঈদ পুণর্মিলনীর কথা।

তা স্যার পার্সেন্টিজ ডাকলেন। এর পর বললেন, আজ গান হবে। ক্লাস হবে না। সবাই মহা খুশী। একদিকে বাহিরের ছন্দ ময় বৃষ্টি অন্যদিকে ক্লাসের সবার আনন্দ উল্লাস ব্যাপারটা সত্যিই উপভোগ্য।

এদিকে ক্লাসের সামনে দিয়ে লাল পাঞ্জাবি পড়ে যাচ্ছিলেন সাইফুল স্যার। তাকে দেখে রাজু স্যার আমাদের ক্লাসে ঢুকিয়ে ফেললেন।

সাইফুল স্যার উঁকি ঝুঁকি মারছিলেন বাহিরের দিকে। বলছিলেন পাশের রুমে বিভাগীয় প্রধান স্যার আছে, আর যেকোন সময় ভাইস প্রিন্সিপাল আসতে পারে।

রাজু স্যার বলেন, আরে সমস্যা নেই। গান হোক। গানে গানে মজা হোক।

সাইফুল স্যার হেসে হেসে বলে, হুম হতে পারে। তবে আওয়াজ হীন গলায়। যাতে পাশে শোনা না যায়।

এটা শুনে সবাই ফেটে পড়ে অট্টহাসিতে।

তা গান শুরু হবে ঠিক আছে এটা সবাই একমত। কিন্তু কে শুরু করবে তাতে দেখা গেল ভিন্নমতের গণজোয়ার। কেউ এর নাম কেউ বলে ওর নাম।

শেষ পর্যন্ত অবস্থা বেগনিত দেখে সাইফুল স্যার শুরু করেন কফি হাউসের সে আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই এই গানটা দিয়ে।
এরপর গাইলেন, নচিকেতার যখন সময় থমকে দাঁড়ায় গানটি।

স্যারদের পক্ষ থেকে গান হলো। এবার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে।
কে করবে কে করবে বিভিন্ন জনের উপর দিয়ে এই জিনিসটা যাওয়ার পর শেষ পর্যন্ত সুমি গান ধরলো।

মেয়েটা কথা বলার সময় মনে হয় না এত সুন্দর গাইতে পারে। মুগ্ধ হয়ে সবাই শুনে গেল।
কথা ছিলো দেখা হবে,,

বাহিরে বৃষ্টির আবেগিত আবহ ভিতরে অপূর্ব গলায় রোমান্টিক গান সত্যি এক ভিন্ন রকম পরিবেশের সূচনা করে সে সময়টাতে। মুগ্ধতা তখন সবার অবয়বে।

আমি বাহিরে তাকাই। দেখি কাছে যে কয়টি গাছ আছে সেগুলো পাতা বৃষ্টি পরশে ফর্সা থেকে ফর্সাতর হচ্ছে।

তা মেয়েদের পক্ষ থেকে গান শোনানোর পর দাবি উঠল এবার ছেলেদের শোনাতে হবে।

রফিক শুরু করলো, আমি মরে গেলেও তারে দেখার শখ মিটবে নারে মিটবে না..
গানটি গাওয়ার সময় চোখ বন্ধ করে মুখ বুজে যেভাবে গাচ্ছিলো আমি তো ভাবলাম ও সত্যি অন্যজগতে চলে গেছে। তবে ভাল লাগল তার এই ধ্যান মগ্নটা। গানটার কথার সাথে যেন মিলে গেল।

রাজু স্যারের উপর নজর পড়ল সবার। উনি গানের আয়োজন করলেন। কিন্তু উনি গান গাইবেন না তা কি হয়? বাহিরে বৃষ্টি তার গান গেয়ে যাচ্ছে। সাইফুল স্যার ধরলেন, অবশ্যই গাইতে হবে আপনাকে।

রাজু স্যার মুচকি লাজুক হাসেন। আমি তো গান পারি না।
অল্প হলেও গাইতে হবে।
তা বেশ কয়েকবার বলার পর রাজু স্যার ধরলেন, ভালবাসবো বল.

সাইফুল স্যার তো বলেই ফেলেন , গাইলেন তো এক্কেবারে সবচেয়ে রোমান্টিকটাই গাইলেন। আর গান পাইলেন না বুঝি। রাজু স্যার লাজুক হাসি দেন।

মেয়েরাও হেসে দেয়। ছেলেরাও। তবে মেয়েদের হাসির আওয়াজটাই বেশি হয়েছে বলে মনে হয়।

একটা গান গেয়ে সবাইকে এত মুগ্ধ করে দিলো যে আরেকটা গানের জন্য রিকোয়েস্টের বন্যা ছুটে যায় সুমির দিকে। তা সে এবার ধরে, রবীন্দ্র সংগীত নমো নমো.....

ক্লাস রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো পিয়ন গোপাল দাদা। সাইফুল স্যার তাকে দরজার সামনে দাঁড় করিয়ে দেন। কেউ আসলে যেন আগে থেকে সতর্ক করে দেয়। মজা আর মজা।

এদিকে মেহেদী চারদিকে হাত নাড়ায়। ও ভিডিও করতে থাকে পুরা ঘটনাগুলো।

অনুষ্ঠান শুরুর সময় স্যার বলেন তোমাদের জন্য সুখবর আছে। এই ব্যাপারটা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।

আমরা প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে স্যারের দিকে তাকায়। স্যার বলেন এবার আমাদের বিভাগ থেকে মাস্টার্সে ৪৭ জন ফাস্ট ক্লাস পেয়েছে। এবার থেকে পেতেই থাকবে।

তা সুমির গানের পর আলতাফ গেয়ে উঠে। সে একটা ইসলামী সংগীত শোনায়।

এর পর আবার সাইফুল স্যার। নিজের সাথে লুকোচুরি সবই শূন্য মনে হয়। চমৎকার গলায় গান।
আবেগী হয়ে আমাদের মন।

তা নোটিশ আসে ১১ টা অডিটোরিয়ামে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হবে।
আমরা চলে আসি।

বের হওয়ার পর দেখি আহাদ আস্তে আস্তে গান গাচ্ছে। গান থামিয়ে বলে, দোস্ত আমিও গান গাইবো ভাবছিলাম। আমি বলি, গাইলি না যে।
বলে, গলায় ঠান্ডা লাগছে তো তাই।

আমি হাসি।

বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা মাথায় নিয়ে পথ চলি।

ফেসবুকে এ পোস্টটি