শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৫

স্মৃতিচারণ : একটি চড়ুই

সময় অনেক দ্রুত যায় তাই না! কত সময় চলে গেল। অথচ মনে হচ্ছে এইতো সেদিন ছোটকাল পার করে এলাম। আমার কথার মধ্যে জড়তা তা নিয়ে কত জন হাসাহাসি করত!!! তখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি। বাসার পাশেই কাঁঠাল গাছ। কাঁঠাল গাছটি অনেক স্লিম। জায়গার অভাবেই হয়ত সে নিজেকে ঐভাবে গড়ে নিয়েছে। তবে অনেক কাঁঠাল ধরত। কেউ আবার মুখ লাগানোর চেষ্টা করবেন না। অযথা শ্রম নষ্ট। কারণ মুখ লাগিয়ে লাভ নেই। ৩ বছর আগে প্রিয় কাঁঠাল গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে।


তো সে কাঁঠাল গাছের নিচে হঠাৎ একদিন দেখি একটা চড়ুই পাখির বাচ্চা পড়ে আছে। হয়ত উপর থেকে পড়ে গেছে। তখনও ঠিকমত উড়তে পারে না। চোখের সামনে এরকম পাখি একটা পড়ে থাকলে না ধরে পারা যায়? আমিও চুপি চুপি গিয়ে ধরলাম।


ধরার সাথে সাথে পাখিটি আওয়াজ করে উঠল। কাকে ডাকল বা কাকে কি বলছে তা বুঝলাম না। আমি ঘরে ঢুকে গেলাম পাখিটি সহ। হাতে পাখিটি। একটু একটু ওম তার শরীরে। হাতে ধরে থাকতে ভালোই লাগছিল। বড় কয়েকজন উপদেশ দিলেন ছেড়ে দিতে। কিন্তু তাদের কারো কথা শুনলাম না।

রাতে পাখিটি থাকবে। তাই তার জন্য একটা বাসা বানানোর চিন্তা আসল মাথায়। কসমস বিস্কিটের প্যাকেট দিয়ে বাসা বানালাম। সেখানে গামছা ভাজ করে বিছানা করে দিলাম। বড় আপু বললেন, তুই যে বাকসে রাখবি এখানে শ্বাস প্রশ্বাস না নিতে পারলে তো এটা মারা যাবে। তাই তো!!! সাথে সাথে বাকসে কয়েকটি ছিদ্র করলাম। ছিদ্রগুলো হচ্ছে জানালা। তারপর ছোট চড়ুই পাখিটি বাকসের বিছানায় রাখলাম। দেখি পাখিটি লাফালাফি করছে।


এরকম করলে তো বিপদ। আবার কোথায় না কোথায় পালায় যাবে। সে চিন্তা করে পাখিটির পা বই সেলানোর রশি দিয়ে বাঁধলাম এক প্রান্ত। আরেক প্রান্ত বাঁধলাম বাকসের সাথে। খানা দিতে লাগলাম। কলা, বিস্কুট, চাল, মুড়ি আরো অনেক কিছু দিয়েছিলাম এখন মনে পড়ছে না।


রাতে ঘুমানোর প্রশ্ন এলো। পাখিটিও তো ঘুমাবো। কিন্তু মশা যদি পাখিকে কামড়ায়। তখন তো পাখির ম্যালেরিয়া হয়ে যাবে। পার্বত্য এলাকায় এম্নেই ম্যালেরিয়ার বিনাশী দাপট। তাই রাতে শোওয়ার সময় পাখিটি আমার সাথে মশারীর ভিতর রাখলাম ঐ বাকসো সহ।


পরের দিন স্কুলে যেতে হবে। বেসরকারি স্কুল। একদিন না গেলে খবর আছে। তা পাখিটি ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না। কি করি। শেষে খাটের নিচে পাখিটি লুকিয়ে রাখলাম। কাউকে বললাম না। অন্যরা যদি পাখিটিকে জ্বালাতন করে এই আশঙ্কায়।


অনেক কষ্ট হলো ক্লাস করতে। স্যারদের কথাগুলোকে মনে হচ্ছিলো আবর্জনা। আবর্জনার মাঝে কতক্ষণ থাকা যায়!!!। স্কুল ছুটির পর যত দ্রুত সম্ভব বাসায় ফিরলাম। খাটের নিচ থেকে বাকসোটি বের করলাম। পাখিটিকে খানা খাওয়াবো। হাতে বিস্কুট।


কিন্তু এই কি? দেখি রশির সাথে পাখিটির পায়ের একাংশ আছে। কিন্তু পাখিটি নেই। বিড়ালে আমার পাখিটি খেয়ে ফেলছে।


তা দেখে সে কি কান্না আমার। সবাই স্বান্তনা দিল। এটা এনে দিবে, ঐইটা এনে দেবে অনেক আশ্বাস দিল আমায়। কিন্তু কেউ আমার কান্না সেদিন থামাতে পারেনি।


সে পাখিটার কথা মনে পড়লে এখনো খারাপ লাগে। কেন যে বাঁধতে গিয়েছিলাম সেদিন। বাঁধা না থাকলে তো বিড়ালকে দেখে পালাতে পারত।


নিজেকে অনেক বড় অপরাধী মনে হয়।

কাঁচা হাতের গল্পে : একটি চড়ুই