০১...
"তুমি আমার কল্পনার অস্তিত্ব
কী বোর্ড চেপে হাজার বার লেখা নাম
রাতের স্বপ্ন, দিনের ভাবনা
হতাশার অন্ধ সময়গুলোতে একটা বড় প্রেরণা"
একটু আগে লেখাটি পেয়েছে সোনিয়া। তার বিরক্ত লাগছে। কবিতা লিখতে না পারলে কবিতা লিখতে বলে কে! দেশে কি কবির অভাব হয়েছে যে সবাইকে কবিতা লিখতে হবে। কবিতা পড়তে সোনিয়ার অনেক ভালো লাগে। কাল বিষয়টা ফয়সালকে বলেছিল। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কবিতা লিখে পাঠায় দিলো। ভাবছে কি! কবিতা লিখলেই তার প্রেমে পড়ে যাবে।
শক্ত কোন জবাব দেয়া দরকার। সোনিয়া যখন রাগে তখন গুছিয়ে কিছু বলতে পারে না। সবকিছু এলেমেলো হয়ে যায়। এখন তেমনই হয়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সোনিয়া। মেজাজ কিছুটা ঠান্ডা হলে ফোনটা হাতে নেয়। কল দেয় ফয়সালকে।
: বস্তা পঁচা জিনিস বোঝেন?
: কি বস্তা পঁচা?
: কাঁচা সুপারী বস্তা পঁচা গন্ধ আছে না!
: এখানে কাঁচা সুপারী, পঁচা বস্তা আসলো কোথা থেকে?
: একটু আগে আমার মোবাইলে একটা বস্তা পঁচা গন্ধ এসেছে। সেটা আসার পর থেকে মোবাইলটা ধরতেই অস্বস্তি হচ্ছিলো। সেটা ডিলিট দেয়ার পর কিছুটা শান্তি লাগছে। ওই যে চার লাইনের কি যেন! কোন রহস্য নেই, ভেতরের অর্থ নেই। রহস্য, অর্থ, উপমা ছাড়া কবিতা হয়? কবিতা মানে তামাশা না।
শুনে ফয়সালের কান্না চলে আসবে এ অবস্থা। পুরা এক ঘন্টা চেষ্টা করে ওই চারটা লাইন লিখেছে। লেখাগুলো এতটাই বাজে ছিল!
এপাশ থেকে কিছু বলছে না দেখে সোনিয়াই বলে উঠে, আপনার যদি লজ্জা বলে কিছু থাকে তাহলে আশা করি আর জীবনেও কবিতা লেখার দিকে যাবেন না। কবিতা লেখার জন্য অনেক কবি আছে দেশে। আপনার লাগবে না। কখনও কবিতা লিখবেন না। ফোন রাখছি।
০২.
আজ সোনিয়ার মন ভালো। তাকে নিয়ে ফেসবুকে বেশ জনপ্রিয় কবি একটা কবিতা লিখেছে। কয়েকদিন আগে ওই কবিকে সে নক দিয়েছিল।
কবিতাটি সোনিয়ার ইনবক্সে দিয়েছে।
: আপনি না অনেক ভালো। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছে।
: যে এত বেশি সুন্দর, যাকে দেখলে মুগ্ধতার পরশ ছড়িয়ে যায় এ ধরায় তাকে নিয়ে কবিতা লিখবো না তবে কাকে নিয়ে লিখবো?
: আপনি অনেক বাড়িয়ে বলছেন। তারপরও আমার অনেক বেশি ভালো লাগছে।
: কবিতাটি আপনার পছন্দ হয়েছে?
: হা অনেক অনেক বেশি।
: ঠিক আছে। আপনাকে নিয়ে আরও কবিতা লিখবো।
: সত্যিতো? কথা দেন লিখবেন।
: কথা দেয় কাপুরুষরা। কথা রাখার ব্যাপারে তাদের মধ্যে একটা সংকোচ ভয় কাজ করে তাই তারা কথা দেয়। আমি কথা দিচ্ছি না। কাল ইনবক্সে চেক করলে তারপরই দেখবেন।
: আপনি এত সুন্দর করে যে কথা বলেন। আমার অনেক ভালো লাগে।
: আচ্ছা একটা কথা আপনার বয়স কত?
প্রশ্ন এটা শুনে একটু অস্বস্তিতে পড়ে। যে এত সুন্দর তাকে নিয়ে কবিতা লিখেছে তার যেকোন প্রশ্নের উত্তর দেয়াই যায়। তাই তার বয়সটা বলে দেয়।
০৩.
ফয়সালের কল ধরে না সোনিয়া। ছেলেটার সাথে কয়েকদিন চ্যাট হয়েছে। এতেই সে ধরে নিয়েছে তার সাথে কথা বলতে হবে। এটা কোন কথা হলো। আসলে তখন কথা বলার মত কাউকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। চ্যাট লিস্টে প্রথম দিকে ফয়সাল ছিল। তাই তাকে নক দেয়া। এরপর থেকে কয়েকদিন ধরে কথা।
পরের দিন কবির কাছ থেকে মেসেজ আসে। কবিতা সাধারণত বিজোড় সংখ্যার হয় না। কিন্তু সোনিয়ার কাছে আসা কবিতাটি ১৭ লাইনের।
: আপনি সত্যি সত্যি আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন আবার। আমার এত ভালো লাগছে।
: তুমি কি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো? কবিতাটি বেজোড় সংখ্যায় শেষ হয়েছে। ওহ সরি আপনাকে তুমি করে বললাম।
: না না। আমাকে তুমি করেই বলবেন। আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট হবে। তুমি করে বললেই খুশী হবো। হা আপনার কবিতাটি ১৭ লাইনের। আচ্ছা এটা কেন করলেন?
: সেদিন তোমার বয়স জানতে চাওয়ায় ভড়কে গিয়েছিলে তাই না? আসলে আমার অন্য উদ্দেশ্য ছিল। তোমার বয়স এখন সতের। এখন থেকে তোমাকে নিয়ে লেখা সব কবিতা ১৭ লাইনের হবে। যখন তোমার বয়স ১৮ হবে তখন তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো সব ১৮ লাইনের হবে। প্রতি বছর এভাবে বাড়তে থাকবে।
কবির প্রতি সোনিয়ার মুগ্ধতা বাড়তেই থাকে। কি রোমান্টিক চিন্তাভাবনা! মানুষ এত রোমান্টিক ভাবে ভাবতে পারে?
: আচ্ছা আমার বয়স যখন ৫০ হবে। তখন কি আমাকে নিয়ে লেখা কবিতা ৫০ লাইনের হবে?
: হুম। তবে তার আগে একটা শর্ত আছে।
: কি শর্ত?
: আমাকে তুমি করে বলতে হবে। যাকে নিয়ে কবিতা লিখছি সে আপনি করে বললে বিষয়টা ভালো দেখায় না।
: আমার লজ্জা লাগে।
: কিসের লজ্জা। আমার ভালো লাগবে।
এরপর থেকে তাদের মধ্যে নিয়মিত কথা হয়। সোনিয়া মুগ্ধ থেকে মুগ্ধ হয়। মুগ্ধতা তখন ঘোরে রুপ নিয়েছে।
একদিন সোনিয়া বাসার কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে যায়। কাজী অফিসে গেলে ওই কবির সাথে বিয়ে হয়।
প্রথম কিছুদিন ভালোই কাটে। কিন্তু কিছুদিন পর টের পায় তার কবি সাহেব শুধু তার জন্য কবিতা লিখে না। আরও অনেক মেয়ের জন্যও কবিতা লিখে। ইনবক্সে সেসব কবিতা নিয়মিত পাঠানো হয়।
সারাক্ষণ ল্যাপটপের সামনে বসে থাকে। অন্যান্য মেয়েদের সাথে চ্যাট করে। মাঝে মাঝে বারান্দায় গিয়ে ফিসফিস করে কথা বলে। গভীর রাতেও কথা বলে।
: এসব কি? ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়েদের সাথে মধ্যরাতে কথা বলছো এটা কেমন কথা?
: আমিতো তোমার ঘুমের সমস্যা করছি না। বারান্দায় গিয়ে কথা বলছি। আমি কবি মানুষ। কবিতা লিখি। আমার অনেক ফ্যান। তারা আমাকে ফোন দেয়। আমার কবিতা পছন্দ করে বলেই তো ফোন দেয়। তাদের ফোন না ধরলে কেমন দেখায়।
: তাই বলে এত রাতেও কথা বলতে হবে। দিনের বেলায় ফোন দিতে বলতে পারো না।
: তোমার এত সমস্যা হচ্ছে কেন? আমিতো আর ওদের সাথে গিয়ে থাকছি না।
: মানে কি? এটা কেমন কথা।
: দয়া করে আমার এসব ব্যাপারে কথা বলবে না। আমি কবি মানুষ। আমার ওদের সাথে কথা বলতে হবে।
: না, তুমি রাতে এভাবে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবে না।
: বললে তুমি কি করবে?
: আমি এ ঘর ছেড়ে চলে যাবো।
: মানা করেছে কে?
প্রতিদিন ঝগড়া হতে থাকে তাদের মধ্যে।
একটা সময় সোনিয়া তার ভুল বুঝতে পারে। সে ডিভোর্স দেয় কবিকে।
০৪.
ফয়সাল এখনও সোনিয়ার মোবাইলে রিং দেয়। ফোন বন্ধ। আগের সিমটা আর ইউজ করে না সোনিয়া। ফেসবুকেও নেই সে। এখনও সোনিয়াকে নিয়ে ভাবে। সোনিয়াকে নিয়ে ওর কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সোনিয়া কবিতা লিখতে নিষেধ করেছে। এটা মনে হলেই আর লিখে না। সেদিন তার মন বেশি খারাপ ছিল তাই সেভাবে কথা বলেছে। ফয়সালের মনে হয় একদিন সোনিয়া ঠিকই তাকে কল দিয়ে চমকে দেবে। কোন আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসলেই ভাবে এই বুঝি সোনিয়া ফোন করল।
ফয়সাল কবিতা লিখতো শুধু সোনিয়ার জন্য। আর যার প্রেমে সোনিয়া মুগ্ধ হলো সে কবিতা লিখতো সবাইকে মুগ্ধ করার জন্য। একক মুগ্ধতা ব্যাপারটা যারা ধরতে পারে না তারা ঠকে। চরমভাবে ঠকে।
ফেসবুকে : গল্প-কবিতা ও প্রেম
"তুমি আমার কল্পনার অস্তিত্ব
কী বোর্ড চেপে হাজার বার লেখা নাম
রাতের স্বপ্ন, দিনের ভাবনা
হতাশার অন্ধ সময়গুলোতে একটা বড় প্রেরণা"
একটু আগে লেখাটি পেয়েছে সোনিয়া। তার বিরক্ত লাগছে। কবিতা লিখতে না পারলে কবিতা লিখতে বলে কে! দেশে কি কবির অভাব হয়েছে যে সবাইকে কবিতা লিখতে হবে। কবিতা পড়তে সোনিয়ার অনেক ভালো লাগে। কাল বিষয়টা ফয়সালকে বলেছিল। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে কবিতা লিখে পাঠায় দিলো। ভাবছে কি! কবিতা লিখলেই তার প্রেমে পড়ে যাবে।
শক্ত কোন জবাব দেয়া দরকার। সোনিয়া যখন রাগে তখন গুছিয়ে কিছু বলতে পারে না। সবকিছু এলেমেলো হয়ে যায়। এখন তেমনই হয়েছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সোনিয়া। মেজাজ কিছুটা ঠান্ডা হলে ফোনটা হাতে নেয়। কল দেয় ফয়সালকে।
: বস্তা পঁচা জিনিস বোঝেন?
: কি বস্তা পঁচা?
: কাঁচা সুপারী বস্তা পঁচা গন্ধ আছে না!
: এখানে কাঁচা সুপারী, পঁচা বস্তা আসলো কোথা থেকে?
: একটু আগে আমার মোবাইলে একটা বস্তা পঁচা গন্ধ এসেছে। সেটা আসার পর থেকে মোবাইলটা ধরতেই অস্বস্তি হচ্ছিলো। সেটা ডিলিট দেয়ার পর কিছুটা শান্তি লাগছে। ওই যে চার লাইনের কি যেন! কোন রহস্য নেই, ভেতরের অর্থ নেই। রহস্য, অর্থ, উপমা ছাড়া কবিতা হয়? কবিতা মানে তামাশা না।
শুনে ফয়সালের কান্না চলে আসবে এ অবস্থা। পুরা এক ঘন্টা চেষ্টা করে ওই চারটা লাইন লিখেছে। লেখাগুলো এতটাই বাজে ছিল!
এপাশ থেকে কিছু বলছে না দেখে সোনিয়াই বলে উঠে, আপনার যদি লজ্জা বলে কিছু থাকে তাহলে আশা করি আর জীবনেও কবিতা লেখার দিকে যাবেন না। কবিতা লেখার জন্য অনেক কবি আছে দেশে। আপনার লাগবে না। কখনও কবিতা লিখবেন না। ফোন রাখছি।
০২.
আজ সোনিয়ার মন ভালো। তাকে নিয়ে ফেসবুকে বেশ জনপ্রিয় কবি একটা কবিতা লিখেছে। কয়েকদিন আগে ওই কবিকে সে নক দিয়েছিল।
কবিতাটি সোনিয়ার ইনবক্সে দিয়েছে।
: আপনি না অনেক ভালো। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছে।
: যে এত বেশি সুন্দর, যাকে দেখলে মুগ্ধতার পরশ ছড়িয়ে যায় এ ধরায় তাকে নিয়ে কবিতা লিখবো না তবে কাকে নিয়ে লিখবো?
: আপনি অনেক বাড়িয়ে বলছেন। তারপরও আমার অনেক বেশি ভালো লাগছে।
: কবিতাটি আপনার পছন্দ হয়েছে?
: হা অনেক অনেক বেশি।
: ঠিক আছে। আপনাকে নিয়ে আরও কবিতা লিখবো।
: সত্যিতো? কথা দেন লিখবেন।
: কথা দেয় কাপুরুষরা। কথা রাখার ব্যাপারে তাদের মধ্যে একটা সংকোচ ভয় কাজ করে তাই তারা কথা দেয়। আমি কথা দিচ্ছি না। কাল ইনবক্সে চেক করলে তারপরই দেখবেন।
: আপনি এত সুন্দর করে যে কথা বলেন। আমার অনেক ভালো লাগে।
: আচ্ছা একটা কথা আপনার বয়স কত?
প্রশ্ন এটা শুনে একটু অস্বস্তিতে পড়ে। যে এত সুন্দর তাকে নিয়ে কবিতা লিখেছে তার যেকোন প্রশ্নের উত্তর দেয়াই যায়। তাই তার বয়সটা বলে দেয়।
০৩.
ফয়সালের কল ধরে না সোনিয়া। ছেলেটার সাথে কয়েকদিন চ্যাট হয়েছে। এতেই সে ধরে নিয়েছে তার সাথে কথা বলতে হবে। এটা কোন কথা হলো। আসলে তখন কথা বলার মত কাউকে পাওয়া যাচ্ছিলো না। চ্যাট লিস্টে প্রথম দিকে ফয়সাল ছিল। তাই তাকে নক দেয়া। এরপর থেকে কয়েকদিন ধরে কথা।
পরের দিন কবির কাছ থেকে মেসেজ আসে। কবিতা সাধারণত বিজোড় সংখ্যার হয় না। কিন্তু সোনিয়ার কাছে আসা কবিতাটি ১৭ লাইনের।
: আপনি সত্যি সত্যি আমাকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন আবার। আমার এত ভালো লাগছে।
: তুমি কি একটা ব্যাপার খেয়াল করেছো? কবিতাটি বেজোড় সংখ্যায় শেষ হয়েছে। ওহ সরি আপনাকে তুমি করে বললাম।
: না না। আমাকে তুমি করেই বলবেন। আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট হবে। তুমি করে বললেই খুশী হবো। হা আপনার কবিতাটি ১৭ লাইনের। আচ্ছা এটা কেন করলেন?
: সেদিন তোমার বয়স জানতে চাওয়ায় ভড়কে গিয়েছিলে তাই না? আসলে আমার অন্য উদ্দেশ্য ছিল। তোমার বয়স এখন সতের। এখন থেকে তোমাকে নিয়ে লেখা সব কবিতা ১৭ লাইনের হবে। যখন তোমার বয়স ১৮ হবে তখন তোমাকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো সব ১৮ লাইনের হবে। প্রতি বছর এভাবে বাড়তে থাকবে।
কবির প্রতি সোনিয়ার মুগ্ধতা বাড়তেই থাকে। কি রোমান্টিক চিন্তাভাবনা! মানুষ এত রোমান্টিক ভাবে ভাবতে পারে?
: আচ্ছা আমার বয়স যখন ৫০ হবে। তখন কি আমাকে নিয়ে লেখা কবিতা ৫০ লাইনের হবে?
: হুম। তবে তার আগে একটা শর্ত আছে।
: কি শর্ত?
: আমাকে তুমি করে বলতে হবে। যাকে নিয়ে কবিতা লিখছি সে আপনি করে বললে বিষয়টা ভালো দেখায় না।
: আমার লজ্জা লাগে।
: কিসের লজ্জা। আমার ভালো লাগবে।
এরপর থেকে তাদের মধ্যে নিয়মিত কথা হয়। সোনিয়া মুগ্ধ থেকে মুগ্ধ হয়। মুগ্ধতা তখন ঘোরে রুপ নিয়েছে।
একদিন সোনিয়া বাসার কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে যায়। কাজী অফিসে গেলে ওই কবির সাথে বিয়ে হয়।
প্রথম কিছুদিন ভালোই কাটে। কিন্তু কিছুদিন পর টের পায় তার কবি সাহেব শুধু তার জন্য কবিতা লিখে না। আরও অনেক মেয়ের জন্যও কবিতা লিখে। ইনবক্সে সেসব কবিতা নিয়মিত পাঠানো হয়।
সারাক্ষণ ল্যাপটপের সামনে বসে থাকে। অন্যান্য মেয়েদের সাথে চ্যাট করে। মাঝে মাঝে বারান্দায় গিয়ে ফিসফিস করে কথা বলে। গভীর রাতেও কথা বলে।
: এসব কি? ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়েদের সাথে মধ্যরাতে কথা বলছো এটা কেমন কথা?
: আমিতো তোমার ঘুমের সমস্যা করছি না। বারান্দায় গিয়ে কথা বলছি। আমি কবি মানুষ। কবিতা লিখি। আমার অনেক ফ্যান। তারা আমাকে ফোন দেয়। আমার কবিতা পছন্দ করে বলেই তো ফোন দেয়। তাদের ফোন না ধরলে কেমন দেখায়।
: তাই বলে এত রাতেও কথা বলতে হবে। দিনের বেলায় ফোন দিতে বলতে পারো না।
: তোমার এত সমস্যা হচ্ছে কেন? আমিতো আর ওদের সাথে গিয়ে থাকছি না।
: মানে কি? এটা কেমন কথা।
: দয়া করে আমার এসব ব্যাপারে কথা বলবে না। আমি কবি মানুষ। আমার ওদের সাথে কথা বলতে হবে।
: না, তুমি রাতে এভাবে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবে না।
: বললে তুমি কি করবে?
: আমি এ ঘর ছেড়ে চলে যাবো।
: মানা করেছে কে?
প্রতিদিন ঝগড়া হতে থাকে তাদের মধ্যে।
একটা সময় সোনিয়া তার ভুল বুঝতে পারে। সে ডিভোর্স দেয় কবিকে।
০৪.
ফয়সাল এখনও সোনিয়ার মোবাইলে রিং দেয়। ফোন বন্ধ। আগের সিমটা আর ইউজ করে না সোনিয়া। ফেসবুকেও নেই সে। এখনও সোনিয়াকে নিয়ে ভাবে। সোনিয়াকে নিয়ে ওর কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু সোনিয়া কবিতা লিখতে নিষেধ করেছে। এটা মনে হলেই আর লিখে না। সেদিন তার মন বেশি খারাপ ছিল তাই সেভাবে কথা বলেছে। ফয়সালের মনে হয় একদিন সোনিয়া ঠিকই তাকে কল দিয়ে চমকে দেবে। কোন আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসলেই ভাবে এই বুঝি সোনিয়া ফোন করল।
ফয়সাল কবিতা লিখতো শুধু সোনিয়ার জন্য। আর যার প্রেমে সোনিয়া মুগ্ধ হলো সে কবিতা লিখতো সবাইকে মুগ্ধ করার জন্য। একক মুগ্ধতা ব্যাপারটা যারা ধরতে পারে না তারা ঠকে। চরমভাবে ঠকে।
ফেসবুকে : গল্প-কবিতা ও প্রেম