বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০১৬

ভালোবাসা

রত্নার সাথে ফাহাদের দেখা সাড়ে তিন বছর পর। সর্বশেষ দেখা হয়েছিল বিষন্ন এক সন্ধ্যায়। বাসায় ঝামেলার পর বের হয়েছিল রত্না। যারা সবসময় চটপটে ধরণের থাকে তারা যখন টেনশনে থাকে তখন তাদের অচেনা লাগে। রত্নাকেও অচেনা মনে হচ্ছিলো।
এসেই বলে, আজ রাতে আমাকে দেখতে আসবে। চলো আমরা পালিয়ে যাই।
: দেখতে আসলেই তো বিয়ে হবে না।

: বাসার পরিবেশ দেখে মনে হচ্ছে আজ রাতেই আকদ। চলো না আমরা পালিয়ে যাই। আমি আর ঘরে ফিরে যাবো না।


: শুনো মাথা গরম করো না। নিজেই চলতে পারি না, সেখানে তোমাকে নিয়ে এখন কিভাবে সম্ভব! এসব কাজে দায়িত্ববান হতে হয়। নিজের একটা চাকরি হলে হয়ে যেত।
: তোমাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না। আমিও টিউশনি করবো। দেখো আমাদের তেমন সমস্যা হবে না।

ফাহাদ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তারপর বলে, শুনো, বাস্তব জীবন বইয়ের কিংবা ফেসবুক-ব্লগে প্রকাশিত হওয়া গল্প না। গল্পের দৃশ্যগুলো অনেক সুন্দর, কারণ লেখক কল্পনা করে ওসব লিখে। তাই যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারে, জীবনটাকে মধুর বানিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। এখন পালালে আমরা যাবো কোথায়? রাস্তায় রাস্তায় তো জীবন পার করা যাবে না।

: একটা ব্যবস্থা নিশ্চয় হয়ে যাবে। তুমি প্লিজ একটু সিরিয়াস হও।
রত্নার বলার মধ্যে অনেক বেশি আকুতি। এখনই যেন কেঁদে দেবে।
: আমি সিরিয়াস বিধায়ই তো এভাবে ছেলেমানুষী ব্যাপারে উৎসাহিত হচ্ছি না। নাহলে তো তুমি বলার সাথে সাথে দুজনে ছুটে পালাতাম। এতক্ষণে হয়ত আমরা বাসে থাকতাম কোন অজানার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। তুমি বোঝার চেষ্টা করো জীবনটা ছেলে খেলা নয়। হুটহাট সিদ্ধান্তের কারণে সময়ের ব্যবধানে মানুষের কষ্ট অনেক বেশি বেড়ে যায়। তখন সবকিছু অসহ্য ঠেকে।

রত্নার নিজেকে অনেক বেশি অসহায় লাগে। আরো কিছু বুঝায় ফাহাদ। রত্না শুধু শুনে যায়, কিছু বলে না।

কথা গুলো না বুঝলেও সুবোধ বালিকার মত ঘরে ফিরে যায়। তার অনেক খারাপ লাগে ফাহাদ তাকে বোঝা ভেবেছে এটা মনে করে।

সেদিন রাতেই রত্নার আকদ হয়ে যায়। রাতে আর ঘুমাতে পারে নি রত্না। সারারাত ভেবেছে। অসহায় মানুষগুলো শুধু ভাবতেই পারে। তাদের ভাবনা দিয়ে কোন লাভ হয় না। সে ভাবনাগুলো কেউ দেখতে পায় না, সে কষ্ট গুলো অন্য কেউ অনুভব করে না। পৃথিবীর সব কিছুই ঠিকঠাকমত চলতে থাকে। কষ্টটা তাকেই শুধু বহন করতে হয়।
আকদ হয়ে যাওয়ার কথাটা রত্নার বান্ধবী সোমার কাছ থেকে জানতে পারে ফাহাদ। কথাটা শোনার পরই মাথা ঝিম মেরে যায়। সবকিছু অন্যরকম মনে হতে থাকে। কিন্তু এখন তো আর লাভ নেই। সব নিয়ন্ত্রণের বাহিরে।

দুইদিন পর মেসেজ দিয়ে বিয়ের দাওয়াত দেয় রত্না, "ফাহাদ ভাই, আপনার বোঝা তো দূর হয়ে গেলো। আপনার বোঝা দূরীকরণ উৎসবে আশা করি আসবেন। খুশী হবো।"
ফাহাদের নিজেকে বড় কাপুরুষ মনে হয়। রত্না তো ঠিকই পালিয়ে যেতে চেয়েছিলো তার সাথে। কিন্তু সে সাহস করে নি। কাপুরুষদের বিয়ে করতে নেই। ফাহাদ সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় সে কখনো বিয়ে করবে না।

নিজের কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকে ফাহাদ।

আবার সাড়ে তিন বছর পর দেখা, বিয়ের পর প্রথম দেখা। রত্না আগের চেয়ে আরো বেশি সুন্দরী হয়েছে। বিলাসবহুল বাস কাউন্টারটা কাঁচঘেরা। এসি চলছে, ঠান্ডা বাতাস রুম জুড়ে। রত্নাকে দেখে এ ঠান্ডার মধ্যেও ঘামতে থেকে ফাহাদ।
রত্নার পাশে তার হাজব্যান্ড বসা। রত্না ভদ্রলোকের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে, হাত নাড়িয়ে কি যেন বোঝাচ্ছে। সে আগের উচ্ছাসিত হাসি। ভদ্রলোক অবাক হয়ে রত্নাকে দেখেন। রত্না তো এমন উচ্ছাসিতভাবে হাসে না।

রত্না ফাহাদকে দেখাতে চায় সে অনেক সুখে আছে, অন্য কারো কথা তার মনে হয় না। তার ভেতরে এখনও যে কষ্ট সেটা সে প্রকাশ হতে দিতে চায় না। কেউ তার কষ্টের কথা না জানুক। যার জন্য কষ্ট তারও জানার কোন দরকার নেই।

ভদ্রলোকের খুব ভাল লাগে স্ত্রীর এমন মিস্টি হাসি দেখে। গম্ভীর মেয়েটা এত সুন্দর করে হাসতে পারে! তবে তিনি ঠিক আবিষ্কার করতে পারেন না হঠাৎ করে তার স্ত্রীর এত খুশীর কারণ কি!

কিছু বিষয় অজানাই থেকে যায়। যেমন অজানা থেকে যাবে ভদ্রলোকের কাছে তার স্ত্রী-র এভাবে হঠাৎ খুশী হয়ে উঠার কারণ।

ফাহাদ চলে যাচ্ছে তার বিশাল লাগেজটা ঠেলতে ঠেলতে.... থেমে গেছে রত্নারও হাসি!

ফেসবুকে : ভালোবাসা