মেয়ের বিয়ে দেয়া যে কত কষ্টের তা হাড়ে হাড়ে টের
পাচ্ছেন আলতাফ মিয়া। ছেলে পক্ষের চাহিদার শেষ নেই। আজ এটাতো কাল ওইটা। অথচ
এখনও বিয়েই হয়নি। তারপরও তিনি সামাল দিয়ে যাচ্ছেন। কারণ ছেলে ভালো। এ
সময়টাতে ভালো ছেলে খুঁজে পাওয়াটা বেশ কঠিন।
এখনকার ছেলেদের দেখা যায়, অন্য এক জায়গায় বিয়ে করে আবার নতুন বিয়ে করতে আসে। আগের সব কিছু গোপন রাখে। অন্য এলাকায় বিয়ে করায় সহজে টেরও পাওয়া যায় না। এইতো কিছুদিন আগে তার দুই ঘর পরের প্রতিবেশী মেজবাহ উদ্দীনের মেয়ের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটলো। বেশ আয়োজন করে বিয়ে দেয়া হলো। দুই মাস পর জানা গেলো ছেলের অন্য জায়গায় আরেকটা বউ আছে। মেজবাহ উদ্দীন এখন বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকেন। বের হন না। অথচ আগে বিকেল বেলায় রোকনের চায়ের দোকানে আয়েশ করে বসে গল্প করতেন। গণি মিয়াও যেতেন। পাড়ার আরও অনেকে আসত। মেজবাহ উদ্দীন বিভিন্ন গল্প বলতেন।
এখন তিনি বের হন না। লজ্জায় বের হন না। এ ধরণের লজ্জায় পড়তে চান না আলতাফ মিয়া। তাই অনেক ভালো করে খোঁজ খবর নিয়েছেন। না ছেলের অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছে এ ধরণের কোন সমস্যা নেই। বেশ ভালো ছেলে। তবে ছেলের চাচাটা একটু অন্যরকম।বিয়ের কথাবার্তা তার মাধ্যমেই হচ্ছে।
: হোন্ডাটা কিন্তু শো রুম থেকে কিনবেন। বাহির থেকে নিলে দুই নাম্বারি, পুরান ইঞ্জিনের ধরায় দিতে পারে। আর কম দামের দেশি জিনিস নিতে যাইয়েন না। দেখা যাবে দুই দিন পর পর ভট ভট করছে। স্টার্ট নিচ্ছে না। হোন্ডা তো আর বার বার কেনার জিনিস না। তাই দাম দিয়ে বিদেশী ব্যান্ডের কিনলে ভালো হয়। কি বলেন?
অসহায় দৃষ্টিতে মাথা নাড়ান আলতাফ মিয়া। হোন্ডার টাকা কোথা থেকে যোগাড় করবেন তিনি ঠিক করতে পারেননি। কিন্তু পাত্র পক্ষের লোক। একথা বলাও যাবে না। বললে দেখা যাবে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাচ্ছে।
রুনা বাবার অসহায় মুখটা দেখে। নিজেকে বোঝা মনে হয়।
বাবা প্রেসারের রোগী। সম্ভবত আবার প্রেসার উঠেছে।
: বাবা তোমাকে এমন লাগছে কেন? খারাপ লাগছে?
: না মা, এইতো ঠিক হয়ে যাবে।
: দাড়াও তেল নিয়ে আসছি।
মাথা ঠান্ডা করে এমন একটা তেল আছে। সেটা মাথায় মালিশ করলে কিছুটা ভালো লাগে।
রুনা বাবার মাথায় তেল মালিশ করে দেয়। আলতাফ মিয়া কিছুটা ভালো বোধ করেন।
: বাবা, এতগুলো টাকা কোথায় পাবে? তুমি যে হোন্ডা দিতে রাজি হয়ে গেলে। আর এখুনি বিয়ে দিতে হবে কেন?
: শুন, মা। টাকা কোথাও থেকে না কোথাও থেকে যোগাড় করা যাবে। কিন্তু এমন ভালো ছেলে হাতছাড়া হয়ে গেলে পাওয়া যাবে না। ছেলে আমার অনেক পছন্দ।
: যে ছেলে পক্ষ এত এত জিনিস চায় তারা ভাল হয় কিভাবে?
: মা, ছেলে তো এসব চাচ্ছে না। ছেলের আত্মীয় চাচ্ছে। ছেলের দোষ কোথায়?
: ছেলের কি হাত পা নেই। মানা করতে পারছে না?
: অনেক ছেলে আছে বড়দের ওপর কথা বলে না। সেজন্য হয় কথা বলছে না। আর তুই এত চিন্তা করছিস কেন। দেখবি সব যোগাড় হয়ে যাবে।
: মা, আমি মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে অনেক ভাল হতো। তোমাকে সাহায্য করতে পারতাম।
: ছেলের সাথে আমি কথা বলেছি। অনেক ভদ্র। মাথা নিচে রেখে কথা বলে। এখনকার দিনে এমন ছেলে পাওয়া যায় না। তুই অনেক সুখী হবি মা। আমি দোয়া করে দিচ্ছি। আর তোর সাথে মানাবেও বেশ। তোর মা বেঁচে থাকলে এখন অনেক খুশী হতেন।
কোরবানের ঈদ সামনে। আলতাফ মিয়া চিন্তা করেন এটা ভালো সময়। পাড়ার কয়েকজনের কাছ থেকে গরু নেন। পরে ট্রাকে করে সে গরু ঢাকায় আনেন। এবার ভারতীয় গরু আসা বন্ধ রয়েছে। ভালো দাম পাওয়া যাবে। মেয়ের বিয়ের টাকা যোগাড় করতে সমস্যা হবে না আর।
১২ টি গরু। রাস্তায় আসার পথে বেশ কয়েকবার চাঁদা দিতে হয়েছে। গরুর হাটে এসেও দেখেন এখানেও একাধিক চাঁদা পার্টি আছে। হাতে নগদ যা ছিল প্রায় শেষ চাঁদা দিতে দিতে। তারপরও তার মনে ভরসা এবার বেশি দামে গরু বিক্রি করতে পারবেন। সমস্যা হবে না।
খুব গরম পড়ছে। গরু ট্রাক থেকে নামাতে গিয়ে দেখা গেলো একটা গরু মারা গেছে। আরও তিনটা অসুস্থ। তীব্র গরম পড়ছে। এতটা রাস্তা, এত গরম গরুগুলো সহ্য করতে পারেনি।
দৌড়ে ইজারাদারের কক্ষে গেলেন। কান্নাকাটি করে বলতে লাগলেন, পশু ডাক্তার লাগবে। পশু ডাক্তার।
পশু ডাক্তার এলেন। কিন্তু তার আসার আগেই ওই দুইটা গরু মারা গেলো।
আলতাফ মিয়া কাঁদছেন। তার চোখ লাল। তিনি আহাজারি করছেন, হিটস্ট্রোকে গরু না মরে আমার মৃত্যু হলো না কেন? আমার মৃত্যু হলেই তো ভালো ছিল।
হাটের একদিকে বৃদ্ধ লোকটি কেঁদেই যাচ্ছেন। এ লাভের টাকা যোগাড় হলে হোন্ডা কিনবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু হোন্ডা যে কিনতে পারবেন না। মেয়ের বিয়েটা যে আটকে যাবে!
রাতে টিভিতে খবর দেখায়। রুনা দেখে, তার বাবা কাঁদছে। কাঁদার জন্য রিপোর্টারের সাথে কথা বলতে পারছে না।
রুনা কি করবে ভেবে পায় না। সে চিন্তা করে, মেয়ে হলো কেন। কেন?
ফেসবুকে : হিট স্ট্রোক
এখনকার ছেলেদের দেখা যায়, অন্য এক জায়গায় বিয়ে করে আবার নতুন বিয়ে করতে আসে। আগের সব কিছু গোপন রাখে। অন্য এলাকায় বিয়ে করায় সহজে টেরও পাওয়া যায় না। এইতো কিছুদিন আগে তার দুই ঘর পরের প্রতিবেশী মেজবাহ উদ্দীনের মেয়ের ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটলো। বেশ আয়োজন করে বিয়ে দেয়া হলো। দুই মাস পর জানা গেলো ছেলের অন্য জায়গায় আরেকটা বউ আছে। মেজবাহ উদ্দীন এখন বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকেন। বের হন না। অথচ আগে বিকেল বেলায় রোকনের চায়ের দোকানে আয়েশ করে বসে গল্প করতেন। গণি মিয়াও যেতেন। পাড়ার আরও অনেকে আসত। মেজবাহ উদ্দীন বিভিন্ন গল্প বলতেন।
এখন তিনি বের হন না। লজ্জায় বের হন না। এ ধরণের লজ্জায় পড়তে চান না আলতাফ মিয়া। তাই অনেক ভালো করে খোঁজ খবর নিয়েছেন। না ছেলের অন্য কোথাও বিয়ে হয়েছে এ ধরণের কোন সমস্যা নেই। বেশ ভালো ছেলে। তবে ছেলের চাচাটা একটু অন্যরকম।বিয়ের কথাবার্তা তার মাধ্যমেই হচ্ছে।
: হোন্ডাটা কিন্তু শো রুম থেকে কিনবেন। বাহির থেকে নিলে দুই নাম্বারি, পুরান ইঞ্জিনের ধরায় দিতে পারে। আর কম দামের দেশি জিনিস নিতে যাইয়েন না। দেখা যাবে দুই দিন পর পর ভট ভট করছে। স্টার্ট নিচ্ছে না। হোন্ডা তো আর বার বার কেনার জিনিস না। তাই দাম দিয়ে বিদেশী ব্যান্ডের কিনলে ভালো হয়। কি বলেন?
অসহায় দৃষ্টিতে মাথা নাড়ান আলতাফ মিয়া। হোন্ডার টাকা কোথা থেকে যোগাড় করবেন তিনি ঠিক করতে পারেননি। কিন্তু পাত্র পক্ষের লোক। একথা বলাও যাবে না। বললে দেখা যাবে সম্পর্ক ভেঙ্গে যাচ্ছে।
রুনা বাবার অসহায় মুখটা দেখে। নিজেকে বোঝা মনে হয়।
বাবা প্রেসারের রোগী। সম্ভবত আবার প্রেসার উঠেছে।
: বাবা তোমাকে এমন লাগছে কেন? খারাপ লাগছে?
: না মা, এইতো ঠিক হয়ে যাবে।
: দাড়াও তেল নিয়ে আসছি।
মাথা ঠান্ডা করে এমন একটা তেল আছে। সেটা মাথায় মালিশ করলে কিছুটা ভালো লাগে।
রুনা বাবার মাথায় তেল মালিশ করে দেয়। আলতাফ মিয়া কিছুটা ভালো বোধ করেন।
: বাবা, এতগুলো টাকা কোথায় পাবে? তুমি যে হোন্ডা দিতে রাজি হয়ে গেলে। আর এখুনি বিয়ে দিতে হবে কেন?
: শুন, মা। টাকা কোথাও থেকে না কোথাও থেকে যোগাড় করা যাবে। কিন্তু এমন ভালো ছেলে হাতছাড়া হয়ে গেলে পাওয়া যাবে না। ছেলে আমার অনেক পছন্দ।
: যে ছেলে পক্ষ এত এত জিনিস চায় তারা ভাল হয় কিভাবে?
: মা, ছেলে তো এসব চাচ্ছে না। ছেলের আত্মীয় চাচ্ছে। ছেলের দোষ কোথায়?
: ছেলের কি হাত পা নেই। মানা করতে পারছে না?
: অনেক ছেলে আছে বড়দের ওপর কথা বলে না। সেজন্য হয় কথা বলছে না। আর তুই এত চিন্তা করছিস কেন। দেখবি সব যোগাড় হয়ে যাবে।
: মা, আমি মেয়ে না হয়ে ছেলে হলে অনেক ভাল হতো। তোমাকে সাহায্য করতে পারতাম।
: ছেলের সাথে আমি কথা বলেছি। অনেক ভদ্র। মাথা নিচে রেখে কথা বলে। এখনকার দিনে এমন ছেলে পাওয়া যায় না। তুই অনেক সুখী হবি মা। আমি দোয়া করে দিচ্ছি। আর তোর সাথে মানাবেও বেশ। তোর মা বেঁচে থাকলে এখন অনেক খুশী হতেন।
কোরবানের ঈদ সামনে। আলতাফ মিয়া চিন্তা করেন এটা ভালো সময়। পাড়ার কয়েকজনের কাছ থেকে গরু নেন। পরে ট্রাকে করে সে গরু ঢাকায় আনেন। এবার ভারতীয় গরু আসা বন্ধ রয়েছে। ভালো দাম পাওয়া যাবে। মেয়ের বিয়ের টাকা যোগাড় করতে সমস্যা হবে না আর।
১২ টি গরু। রাস্তায় আসার পথে বেশ কয়েকবার চাঁদা দিতে হয়েছে। গরুর হাটে এসেও দেখেন এখানেও একাধিক চাঁদা পার্টি আছে। হাতে নগদ যা ছিল প্রায় শেষ চাঁদা দিতে দিতে। তারপরও তার মনে ভরসা এবার বেশি দামে গরু বিক্রি করতে পারবেন। সমস্যা হবে না।
খুব গরম পড়ছে। গরু ট্রাক থেকে নামাতে গিয়ে দেখা গেলো একটা গরু মারা গেছে। আরও তিনটা অসুস্থ। তীব্র গরম পড়ছে। এতটা রাস্তা, এত গরম গরুগুলো সহ্য করতে পারেনি।
দৌড়ে ইজারাদারের কক্ষে গেলেন। কান্নাকাটি করে বলতে লাগলেন, পশু ডাক্তার লাগবে। পশু ডাক্তার।
পশু ডাক্তার এলেন। কিন্তু তার আসার আগেই ওই দুইটা গরু মারা গেলো।
আলতাফ মিয়া কাঁদছেন। তার চোখ লাল। তিনি আহাজারি করছেন, হিটস্ট্রোকে গরু না মরে আমার মৃত্যু হলো না কেন? আমার মৃত্যু হলেই তো ভালো ছিল।
হাটের একদিকে বৃদ্ধ লোকটি কেঁদেই যাচ্ছেন। এ লাভের টাকা যোগাড় হলে হোন্ডা কিনবেন ভেবেছিলেন। কিন্তু হোন্ডা যে কিনতে পারবেন না। মেয়ের বিয়েটা যে আটকে যাবে!
রাতে টিভিতে খবর দেখায়। রুনা দেখে, তার বাবা কাঁদছে। কাঁদার জন্য রিপোর্টারের সাথে কথা বলতে পারছে না।
রুনা কি করবে ভেবে পায় না। সে চিন্তা করে, মেয়ে হলো কেন। কেন?
ফেসবুকে : হিট স্ট্রোক