শনিবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৫

অভিমান (অনুগল্প)

নতুন বিয়ে হলো। মেয়েটার মন খারাপ। মন খারাপের বড় কারণ বাসায় বড় একটা সময় তাকে একা থাকতে হয়। ছেলেটি বেজায় ব্যস্ত।
রাতে ফ্রেশ হওয়ার পর ছেলেটি বারান্দায় বসে। বাহির থেকে খেয়ে এসেছে।
মেয়েটি একসাথে খাবে বলে অপেক্ষা করছিল। যখন শুনলো বাহির থেকে খেয়ে এসেছে তখন বলল, ভালই হয়েছে তুমি বাহির থেকে খেয়ে এসেছো। আমার ক্ষুধা লাগছিল। তাই আগে আগে খেয়ে নিয়েছি আজ।

: গুড। ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নেবে।
মেয়েটি মাথা নাড়ে। ভেতরে ভেতরে বলে, একসাথে খাওয়ার আনন্দ তুমি কি সেটা জানো না। তুমি জানবে না আজ না খেয়েই আমি থাকবো। মাঝে মাঝে নিজেকে কষ্ট দেয়া ভালো। অভিমানী কষ্ট!!
: কফি বানানো যাবে?

: হা অবশ্যই। তুমি বসো। আমি বানিয়ে নিয়ে আসছি।
মেয়েটি কফি বানিয়ে আনে। তার অনেক কথা জমে আছে। ইচ্ছে করে কথা বলেই যায়।
কফির কাপটা হাতে নিয়ে ছেলেটি বলে, আচ্ছা তুমি না সেদিন হানিমুনের কথা বলছিলে। কালকে যাবে? কোথায় যেতে চাও?
: তোমার না নতুন অফিসে অনেক বেশি কাজ।
: আরে সমস্যা নেই। সকাল বেলায় তোমাকে প্লেনে তুলে দিয়ে এসে অফিসে যাবো।
: মানে? তুমি যাবে না?
: আমার মনে হয় না এ মাসে যাওয়া হবে। বড়ই চাপ যাচ্ছে।
: মানে কি! আমি একা একা হানিমুন করবো? টাকার পেছনে ছুটে তোমার মাথা পুরা গেছে।

ছেলেটি মাথা ঝাড়ে। বাহিরের দিকে তাকায়। একটা ছেলে রাস্তায় শোওয়ার ব্যবস্থা করছে। থাকার জায়গা নেই। একদিন তারও থাকার জায়গা ছিল না। পার্কে থাকতে হয়েছিল। পুলিশের পিটুনি খেয়েছে অনেকদিন। একবার শীতের রাতে শুয়ে ছিল। সেদিন শীতের প্রকোপটা বেশিই ছিল। অল্প রাত হতেই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে গেলো। এত শীতে মানুষ বাহিরে করবেটা কি। সেদিন গুটিশুটি মেরে শুয়েছিল। গায়ে কম্বল। দুইদিন আগে একটা এনজিও দিয়ে গেছে। পুলিশ এসে লেকের ঠান্ডা পানি ঢালে দিয়ে যায়। ভেজা শরীর নিয়ে কাপতে কাপতে সে রাত তার কাটে।

এখন বাড়ি আছে, গাড়ি আছে, সম্মান আছে। তবে আগের ইতিহাসগুলো কখনো জানবে না এ মেয়েটি। ইচ্ছে করে নিজেকে রোবট টাইপের বানিয়ে রাখে ছেলেটি। তারও খুব ভালোবাসা দেখাতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু নিজেকে কষ্ট দেয়। আগের কথা ভেবে কষ্ট। কিছু অভিমানী কষ্ট!!
 
ফেসবুকে : অভিমান