বাবা
মানে কি তা বোঝার আগেই চলে যায় তৃণার বাবা। নাহ দুনিয়া ছেড়ে যাননি। অন্য
এক মহিলার সাথে সম্পর্ক ছিল। সে মহিলার সাথে সংসার করতে চলে গেছেন।
অন্য মেয়েরা যখন বাবার গল্প বলতো তখন তৃণা কিছু বলতে পারতো না। তার বাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো। কিন্তু উত্তর দিতে পারতো না। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতো। একবার স্কুলে এক শিক্ষক সবার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন। কার বাবা কি করে। একজনের পর একজন দাঁড়ায়। তৃণার সময় যখন আসে। সে দাঁড়িয়ে চুপ থাকে। কিছু বলে না।
: তোমার বাবা কোথায়? কি কথা বলছো না যে মেয়ে?
: বাবা নেই?
মাথা নাড়ে তৃণা।
: কি হয়েছে? মারা গেছে?
মাথা নিচু করে রাখে তৃণা।
: বড় বিপদে পড়া গেলো তো। আরে মেয়ে উত্তর দাও। তুমি কি কথা বলতে পারো না?
: কথা বলতে পারি স্যার।
এসময় ক্লাসের সবাই হেসে উঠে। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা হয় তৃণার। চোখ থেকে পানি পড়ে। ব্যাপারটা খেয়াল করেন ওই শিক্ষক। নাম তার আলতাফ হোসেন।
টেবিলে রাখা ডাস্টারটি হাতে নেন। সেটা দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিয়ে সবাইকে থামতে বলেন। সবাই চুপ হয়ে যায়।
: মেয়ে তুমি বসো। স্কুল ছুটির পর আমার সাথে দেখা করবে।
সেদিনের ঘটনাটি কিছুটা হলেও বদলে দেয় তৃণার জীবন। আগে দেখে এসেছে সবাই তাকে তুচ্ছার্থ করেছে। পাশের গ্রামে আপন খালা থাকে। দুই খালাতো ভাই বোন। অথচ সেখানে ঘুরতে গেলে একা বসে থাকতে হয়। খালা খুব কড়া। ছেলেমেয়েদের বলে দিয়েছেন যাতে তার সাথে না মিশে।
মা বাসায় কাপড় সেলাই করেন। যারা অর্ডার দেয় তারা ঠিকমত টাকা দেয় না অনেক সময়। পাড়ার দোকানে এজন্য বাকী পড়ে। কিছু আনতে গেলে দোকানের ছেলেটা বলে, কিরে আবার কি নিতে আসছিস। আগের টাকাগুলো পরিশোধ করার আগে কিছু দিতে পারবো না। মালিক নিষেধ করেছে। দোকানের কোণায় দাড়িয়ে থাকে তৃণা। কখনো দেয় কখনো দেয় না।
আলতাফ স্যার ক্লাসে ইংরেজি পড়ান। তৃণাকে বলেন, তোমার কান্না করার তো কোন কারণ নেই। বাবা চলে গেছে এখানে তোমার তো কোন ভূমিকা নেই। আর বাবার পরিচয়ে সবাইকে পরিচিত হতে হয় না। নিজে এমন কিছু হও যাতে তোমার নিজের পরিচয়ে তুমি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। এজন্য ইংরেজি বেশি করে পড়তে হবে।
এই তুমি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকো কেন? আমার দিকে তাকাও।
ভয়ে ভয়ে স্যারে দিকে তাকায় তৃণা। শুনো, সকালে আমি বাসায় ব্যাচে পড়াই। যদিও ওপরের ক্লাসের তারা। তারপরও তুমি কাল সকাল থেকে পড়তে আসবে।
আলতাফ স্যারের কাছে নিয়মিত পড়া শুরু করে তৃণা।
আলতাফ স্যার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। একদিন নেট থেকে জানতে পারেন, জাপান একটি রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। সেখানে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরাও অংশ নিতে পারবে। তৃণাকে রচনা লিখতে বলেন।
: স্যার, আমি পারবো না। তার ওপর আবার ইংরেজিতে লিখতে হবে।
: তোকে এই এক বছর তাহলে কি শেখালাম? আমি তো তাহলে ব্যর্থ শিক্ষক!
ছোট্ট তৃণা যেন জেদী হয়ে উঠে এ কথায়। যে স্যার তাকে এত কিছু শিখিয়েছেন, এত স্বপ্ন দেখিয়েছেন তাকে ব্যর্থ প্রমাণ করে কিভাবে।
: না স্যার। আমি লিখবো। আপনাকে দিবো। আপনি ঠিক করে দিবেন।
স্যারের মুখে হাসি ফুটে।
এক পিতা ছাড়া মেয়ের জীবনের গল্প লিখে তৃণা। কিভাবে কষ্টে চলে তার আর তার মায়ের কষ্টের জীবন। কিভাবে পাড়ার কিছু বয়স্ক লোক তার মা-য়ের প্রতি বাজে ইঙ্গিত করে সব লিখে। আলতাফ স্যারের কথাও আসে লেখায়। শেষে লিখে সে যদি কখনো দেশের প্রধান হয় তবে যাদের বাবা- মা নেই তাদের অন্যরা তুচ্ছার্থ করলে কঠিন শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা নিবে। আর যে বাবা সন্তান রেখে চলে যাবে অন্য জায়গায় তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষ্ঠুর বাবা পরিচয় দেয়া হবে।
লেখাটা পাঠিয়ে দেয়া হয়।
স্যার আপনি কিছু ঠিক না করে যে পাঠিয়ে দিলেন যে! আপনি না বলছিলেন ঠিক করে দেবেন।
লেখাটায় কিছু ভুল আছে সত্য। তবে পুরা লেখাতে কিশোরী ভাবটা আছে। আমি হাত দিয়ে সেটা নষ্ট করতে চাইনি। দেখিস তুই একটা প্রাইজ পেয়ে যাবি। আমি বিচারক হলে এ লেখাটাই প্রথম বলতাম।
আলতাফ স্যারের সাথে ওই জাপানে থাকা বিচারকদের মতামত মিলে গেছে। লেখাটাই প্রথম হয়। জাপানে যেতে হবে পুরষ্কার নেয়ার জন্য। যে মা নিজের গ্রাম ছেড়ে শহরে যাননি সে মা বিশাল বিমানের সামনে। এ বিমানে উঠবে!
বিমান এত বড় কেন তৃণা বিস্মিত! আকাশে যখন ওড়ে তখন তো ছোট মনে হতো।
আলতাফ স্যার বিমান বন্দরে এসেছেন। আকাশে বিমান উড়েছে। আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসছে। ওই বিমানে যাচ্ছে তৃণা যাকে বলতে গেলে তিনিই ইংরেজি শিখিয়েছেন।
ভাবতেই তার ভালো লাগে। চোখ থেকে পানি পড়ে। এই চোখে পানি পড়া দেখেই তিনি তৃণাকে আলাদা করে চিনিছিলেন। আজ তার যে চোখের পানি তা আনন্দের!
ফেসবুকে লিংক
অন্য মেয়েরা যখন বাবার গল্প বলতো তখন তৃণা কিছু বলতে পারতো না। তার বাবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতো। কিন্তু উত্তর দিতে পারতো না। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতো। একবার স্কুলে এক শিক্ষক সবার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন। কার বাবা কি করে। একজনের পর একজন দাঁড়ায়। তৃণার সময় যখন আসে। সে দাঁড়িয়ে চুপ থাকে। কিছু বলে না।
: তোমার বাবা কোথায়? কি কথা বলছো না যে মেয়ে?
: বাবা নেই?
মাথা নাড়ে তৃণা।
: কি হয়েছে? মারা গেছে?
মাথা নিচু করে রাখে তৃণা।
: বড় বিপদে পড়া গেলো তো। আরে মেয়ে উত্তর দাও। তুমি কি কথা বলতে পারো না?
: কথা বলতে পারি স্যার।
এসময় ক্লাসের সবাই হেসে উঠে। লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা হয় তৃণার। চোখ থেকে পানি পড়ে। ব্যাপারটা খেয়াল করেন ওই শিক্ষক। নাম তার আলতাফ হোসেন।
টেবিলে রাখা ডাস্টারটি হাতে নেন। সেটা দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিয়ে সবাইকে থামতে বলেন। সবাই চুপ হয়ে যায়।
: মেয়ে তুমি বসো। স্কুল ছুটির পর আমার সাথে দেখা করবে।
সেদিনের ঘটনাটি কিছুটা হলেও বদলে দেয় তৃণার জীবন। আগে দেখে এসেছে সবাই তাকে তুচ্ছার্থ করেছে। পাশের গ্রামে আপন খালা থাকে। দুই খালাতো ভাই বোন। অথচ সেখানে ঘুরতে গেলে একা বসে থাকতে হয়। খালা খুব কড়া। ছেলেমেয়েদের বলে দিয়েছেন যাতে তার সাথে না মিশে।
মা বাসায় কাপড় সেলাই করেন। যারা অর্ডার দেয় তারা ঠিকমত টাকা দেয় না অনেক সময়। পাড়ার দোকানে এজন্য বাকী পড়ে। কিছু আনতে গেলে দোকানের ছেলেটা বলে, কিরে আবার কি নিতে আসছিস। আগের টাকাগুলো পরিশোধ করার আগে কিছু দিতে পারবো না। মালিক নিষেধ করেছে। দোকানের কোণায় দাড়িয়ে থাকে তৃণা। কখনো দেয় কখনো দেয় না।
আলতাফ স্যার ক্লাসে ইংরেজি পড়ান। তৃণাকে বলেন, তোমার কান্না করার তো কোন কারণ নেই। বাবা চলে গেছে এখানে তোমার তো কোন ভূমিকা নেই। আর বাবার পরিচয়ে সবাইকে পরিচিত হতে হয় না। নিজে এমন কিছু হও যাতে তোমার নিজের পরিচয়ে তুমি সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে। এজন্য ইংরেজি বেশি করে পড়তে হবে।
এই তুমি নিচের দিকে তাকিয়ে থাকো কেন? আমার দিকে তাকাও।
ভয়ে ভয়ে স্যারে দিকে তাকায় তৃণা। শুনো, সকালে আমি বাসায় ব্যাচে পড়াই। যদিও ওপরের ক্লাসের তারা। তারপরও তুমি কাল সকাল থেকে পড়তে আসবে।
আলতাফ স্যারের কাছে নিয়মিত পড়া শুরু করে তৃণা।
আলতাফ স্যার ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। একদিন নেট থেকে জানতে পারেন, জাপান একটি রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। সেখানে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরাও অংশ নিতে পারবে। তৃণাকে রচনা লিখতে বলেন।
: স্যার, আমি পারবো না। তার ওপর আবার ইংরেজিতে লিখতে হবে।
: তোকে এই এক বছর তাহলে কি শেখালাম? আমি তো তাহলে ব্যর্থ শিক্ষক!
ছোট্ট তৃণা যেন জেদী হয়ে উঠে এ কথায়। যে স্যার তাকে এত কিছু শিখিয়েছেন, এত স্বপ্ন দেখিয়েছেন তাকে ব্যর্থ প্রমাণ করে কিভাবে।
: না স্যার। আমি লিখবো। আপনাকে দিবো। আপনি ঠিক করে দিবেন।
স্যারের মুখে হাসি ফুটে।
এক পিতা ছাড়া মেয়ের জীবনের গল্প লিখে তৃণা। কিভাবে কষ্টে চলে তার আর তার মায়ের কষ্টের জীবন। কিভাবে পাড়ার কিছু বয়স্ক লোক তার মা-য়ের প্রতি বাজে ইঙ্গিত করে সব লিখে। আলতাফ স্যারের কথাও আসে লেখায়। শেষে লিখে সে যদি কখনো দেশের প্রধান হয় তবে যাদের বাবা- মা নেই তাদের অন্যরা তুচ্ছার্থ করলে কঠিন শাস্তি দেয়ার ব্যবস্থা নিবে। আর যে বাবা সন্তান রেখে চলে যাবে অন্য জায়গায় তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষ্ঠুর বাবা পরিচয় দেয়া হবে।
লেখাটা পাঠিয়ে দেয়া হয়।
স্যার আপনি কিছু ঠিক না করে যে পাঠিয়ে দিলেন যে! আপনি না বলছিলেন ঠিক করে দেবেন।
লেখাটায় কিছু ভুল আছে সত্য। তবে পুরা লেখাতে কিশোরী ভাবটা আছে। আমি হাত দিয়ে সেটা নষ্ট করতে চাইনি। দেখিস তুই একটা প্রাইজ পেয়ে যাবি। আমি বিচারক হলে এ লেখাটাই প্রথম বলতাম।
আলতাফ স্যারের সাথে ওই জাপানে থাকা বিচারকদের মতামত মিলে গেছে। লেখাটাই প্রথম হয়। জাপানে যেতে হবে পুরষ্কার নেয়ার জন্য। যে মা নিজের গ্রাম ছেড়ে শহরে যাননি সে মা বিশাল বিমানের সামনে। এ বিমানে উঠবে!
বিমান এত বড় কেন তৃণা বিস্মিত! আকাশে যখন ওড়ে তখন তো ছোট মনে হতো।
আলতাফ স্যার বিমান বন্দরে এসেছেন। আকাশে বিমান উড়েছে। আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসছে। ওই বিমানে যাচ্ছে তৃণা যাকে বলতে গেলে তিনিই ইংরেজি শিখিয়েছেন।
ভাবতেই তার ভালো লাগে। চোখ থেকে পানি পড়ে। এই চোখে পানি পড়া দেখেই তিনি তৃণাকে আলাদা করে চিনিছিলেন। আজ তার যে চোখের পানি তা আনন্দের!
ফেসবুকে লিংক