শুক্রবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৫

ভার্চুয়ালে প্রিয় মানুষগুলো..

দুইটা ভিন্ন জগত। একটা অপরটির বিকল্প না। তারপরও অপর জগত বিষয়ে বন্ধুদের কাছ থেকে হারমেশাই টিপ্পনি খেতে হয়। ব্লগ, ফেসবুক তথা অন্তর্জালে আমার একটি আলাদা জগত হয়ে উঠেছে। সেখানে পেয়েছি অনেক প্রিয় মানুষ। ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব বলে ওই জগতের বন্ধুত্বের ব্যাপারটিকে কেউ কেউ তুচ্ছার্থ করে। এ জিনিসটায় ভীষণ খারাপ লাগে। ভার্চুয়ালে ফেক নিক থাকে এটা যেমন সত্য তেমন অনেক ভাল বন্ধুও জুটে যায় এ জগতে।

দাইফ ভাই। লেখা লিখিতে অসম্ভব উৎসাহ দেন। কোন লেখা লিখছি খবর জানালে বাস্তব জীবনে খুব ব্যস্ত ভাইটি লেখাটি পরে পড়ছি পর্যন্ত বলেন না। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় লেখাটিতে কমেন্ট। এমন আকর্ষনীয় কমেন্ট দেন যে, ওইরকম কমেন্টের লোভে হলেও নতুন গল্প লিখতে ইচ্ছা করে। জানুয়ারীতে ঢাকা যাবো শুনে বললেন, ডাল ভাতের দাওয়াত, সাথে আড্ডা ফ্রি। গেলাম। ডাল ভাতের আয়োজন যে বিশাল টেবিল ভরে যায় সেটা জানা ছিল না। দারুণ আড্ডা হলো। চমৎকার একটা দিন।

রাজিন। প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখি করতে গিয়ে পরিচয় হলেও এখন বেশ ভাল বন্ধু। এমন প্রাণবন্ত ছেলে খুব কম দেখা যায়। ওকে দেখলে মনে হয় দু:খের কোন ক্ষমতাই নাই ওকে স্পর্শ করার। আর এমন সব ভুল করে মাঝে মাঝে সেগুলো দেখে হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে যায়।

অস্টেলিয়ায় থাকা, প্রবাস জীবন মানেই কঠিন ব্যস্ততা। সে ব্যস্ততার মধ্যেও ব্লগ, ফেসবুক মাতিয়ে রাখা জুয়েলের সাথে বন্ধুত্বটা একটু বেশিই গভীর। অনেক ক্ষেত্রে তার সাথে ধ্যান ধারণা মিলে যায়। জুয়েলকে ফেসবুকে লাইক ভাই হিসাবেই অনেকে চিনে। জীবনের অনেক বিষয় তার সাথে শেয়ার করি।

কাঁচা হাতের গল্প পাতায় রাজিন, জুয়েলের পাশাপাশি পবিত্র ভাইও এডমিন হিসাবে আছেন। পবিত্র ভাইয়ের সবচেয়ে বড়গুণ লেখায় দারুণ সমালোচনা করতে পারেন। আর বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে তো তাকে বস বলা-ই যায়।

একটু অন্যটাইপের মেয়ে সুষ্মিতা। এজন্যই বললাম যে, ঢাকার মেডিকেল কলেজে চান্স পায়নি এ অভিমানে এ মেয়ে দুই বছর গান শুনে নি, গল্প লিখেনি। আবার লেখালেখি শুরু। প্রায়ই সময় পত্র-পত্রিকায় তার গল্প কবিতা প্রকাশিত হয়।

দারুণ সব স্বপ্ন ওর চোখে। স্বপ্নগুলোর পথে তার এগিয়ে চলা। নিজের কাজের বিষয়কে অনেক বেশি সিরিয়াসভাবে নেওয়ার ক্ষমতার অধিকারী। ফেসবুকে কাঁচা হাতের গল্প যে পেইজ আছে সেখানে এডমিনের তালিকায় সে-ও আছে।

বিশ্ব ইজতেমা যাচ্ছি। তিনদিন টঙ্গীতে থাকবো। সেখান থেকে তো পেইজ চালানো যাবে না। তা রাজিন ভরসার ছিল। কিন্তু ও পারিবারিক ভ্রমণে ঢাকার বাহিরে। জুয়েলকে বললাম, ব্যস্ততার পাশাপাশি সেখানকার সময়ের সাথে বাংলাদেশের সময়ের মিল নাই। তাই তার পক্ষে কঠিন। এসময় সুষ্মিতাকে বলতেই বলল- হা চালিয়ে নিতে পারবে। ওই চারদিন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পেইজ চালালো ক্রিকেট পাগল সুষ্মিতা।

জানলাম, তার এক বান্ধবীর সাথে জাতীয় দলের এক খেলোয়াড়ের বিয়ে হয়েছে। তাকে বললাম, ক্রিকেটার কেন্দ্র করে দাড়াও তোমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখবো। যেখানে তোমার বিয়ে হবে একজন তারকা ক্রিকেটারের সাথে।

আমার কথা শুনে তো সে মহাখুশী। মুন্না ভাই, তাড়াতাড়ি লিখেন। গল্পটা আমার বয় ফ্রেন্ডকে দেখাবো। সে চেটবে। দারুণ হবে।

আরেকজন আছেন। এত সুন্দর করে লিখে। অথচ লেখার নিচে নিজের নামটা দিতে চরম অনাগ্রহ এই বালিকার। বেশ কয়েকটা লেখা লিখছেন। ফেসবুকের পরিচিত অন্যরা ধরতে পারে নাই লেখাগুলো তার।

কিন্তু চোরের দশদিন গেরস্তের একদিন। পেইজে হোস্টেলের নয় বান্ধবীর ছদ্মনাম দিয়ে ওদের কর্মগুণ সম্পর্কে অনেক বেশি সুন্দর একটা লেখা প্রকাশ পেলো। যথারীতি লেখক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেলো। ওই লেখাটা তার বেশ কয়েকজন বান্ধবী তাদের ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার করছেন। কাহিনী কি.. এ লেখা বগুড়া মেডিকেল কলেজের মেয়েরা এভাবে শেয়ার করছে কেন!! বগুড়া মেডিকেল ছাত্রীর লেখা নিশ্চয়ই। এভাবেই ধরা খাওয়া।

অনার্সই এখনও সমাপ্ত করতে পারলাম না, বিয়ে তো সে বেশ দেরি। এর মধ্যেই একজনের কাছ থেকে অফার, ভবিষ্যত প্রজন্মের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রাপ্তির। চিকিৎসা নিতে গেলে আমার কোন টাকা দিতে হবে না।

চট্টগ্রাম মেডিকেলের শেষ বর্ষে পড়ুয়া এই হবু ডাক্তার শিশু ডাক্তার হওয়ার আশায় আছেন।  একটা গল্প লেখা নিয়ে কথা হচ্ছিলো। জিজ্ঞেস করলো কখন লিখছেন? বললাম, আলসেমি দূর করতে পারলেই লিখবো। সে বললো, আমি মাইর দিয়ে আলসেমিকে দূর করে দিই!! কিছুক্ষণ পর আবার বলে, ভয় পেয়েছেন? ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন কেন! বলল, আমি উঁচু স্বরে কথা বলতেই পারি না। এরপর আফসোসের সুর, এজন্য আমাকে কেউ ভয় পায় না।

সময়ের ব্যবধানে ব্যস্ততায় ভার্চুয়াল লাইফের কথা ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। অনেকে ভুলে যাবেন। তবে এ জগতে তাদের কল্যাণে যে সুন্দর মুহূর্তগুলো পাচ্ছি তা সত্যিই ভুলবার মত নয়।