নীরা মানবিক বিভাগে পড়ে।
মফস্বলের একটা মহিলা কলেজে। সেখানে হোস্টেলের ব্যাবস্থা আছে। সে হোস্টেলে থাকে।
হোস্টেলের সিস্টেমগুলো কেমন যেন! একবার হোস্টেলের রান্না ঘরে যে মহিলা দায়িত্ব পালন করে তাকে বলেছিল, আন্টি ঝালটা আরেকটু কম দিয়েন।
তা শুনে সে মহিলা এমন একটা ভাব নিলো যাতে মনে হতে পারে অনেক বড় একটা অপরাধের কথা সে বলে ফেলেছে।
"শুধু তোমার কথা ভাবলেতো হোস্টেল চলবে না। এখানে আরো মেয়ে আছে।"
কথাটা শুনে নীরার কান্না চলে আসলো। ওর বাবা নেই। বাবা না থাকলে যে কত অসহায় হয়ে থাকতে হয়।
টিচাররাও হোস্টেলে এসে খায়। একদিকে নিজেদের পড়ালেখার চাপ। অন্যদিকে টিচারদের প্লেটে ভাত বেড়ে দেয়, তরকারি বাটি নিয়ে যাওয়া, পানির গ্লাস রেডি করে দেয়া সবই তাদেরই করতে হয়। অন্যরা ফাঁকি দেয় বিভিন্ন অজুহাতে। নীরাকেই বেশিরভাগ দিন সামলাতে হয়।
এসময় কলেজে যোগ দেয় নতুন এক ম্যাডাম। সায়মা ম্যাডাম নামে সবাই ডাকে। ব্যাবসা বিভাগের টিচার।
সে সায়মা ম্যাডাম হোস্টেলে থাকেন। তাকে হোস্টেলের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ জানানো হয়। সায়মা ম্যাডাম বলেন, আমি হলে থেকে লেখা পড়া করেছি। ওদের কষ্টটা বুঝি। ওদের কাছ থেকে তোলা টাকা অন্য খাতে ব্যয় হবে, কমিটির শিক্ষকরা তার একটা অংশ নিবেন এসব আমি করতে পারবো না। তাই দায়িত্ব নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। এখানে রশিদ ছাড়া টাকা নেয়া হয়। এগুলো নিয়মে আনা উচিত।
আর আমি খেয়াল করেছি, যে রান্না করে সেও হোস্টেল শিক্ষার্থীদের ঝাড়ি দেয়। ওরা নিশ্চয় এখানে ঝাড়ি খেতে আসেনি। এগুলো কেন চলবে। কত্তবড় সাহস শিক্ষার্থীদের ঝাড়ি দেয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী।
আমি বুঝি না, টিচারদের খাবার দাবার শিক্ষার্থীদের দিয়ে দিতে হবে কেন। যারা দায়িত্বে আছে তারা তো দিতে পারে। আমিতো নিজে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে আসি। খাওয়ার প্লেটটা ধুয়ে রাখি। আমার খাওয়া শেষ হওয়া প্লেটটা অন্য কারো ধুবে এটা ভাবতেই তো অস্বস্তি লাগে।
সায়মা ম্যাডাম আসার পর হোস্টেলের বেশ কিছু নিয়ম পরিবর্তন হয়। নীরার আফসোস হয়, ম্যাডামটা কেন যে ব্যবসা শাখার শিক্ষক, মানবিকের হলে কি সমস্যা ছিল। সুযোগ থাকলে নিজের বিভাগ পরিবর্তন করে ফেলতো, সেটা এখন সম্ভব না।
ম্যাডামকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে নীরা। ইচ্ছে হয় গিয়ে বলতে, একটা মানুষ কেমনে এত ভালো হয়।
নিজের মনমরা ভাবটা অনেকটা কমে গেছে এ ম্যাডাম আসার পর। অনুপ্রেরণা পায় বড় কিছু হওয়ার।
একদিন সাহস করে ম্যাডামকে গিয়ে বলে, ম্যাডাম আমি আপনার ক্লাস করতে চাই।
: তুমি মানবিকের ছাত্রী। আমার ক্লাস কেন করবে।
মন খারাপ হয় নীরার। এটা যেন ম্যাডাম বুঝে ফেলেন। সুন্দর করে হেসে বলেন, আজ তো ওদের থেকে পরীক্ষা নেয়ার কথা। যেদিন লেকচার ক্লাস থাকবে। সেদিন তোমাকে বলবো। ঠিক আছে?
নীরার তখনি ম্যাডামের পা ধরে সালাম করতে ইচ্ছা করে।
++++++++++++++++++++
১৪ বছর পর.......
একটা কলেজে পরিদশর্নে এসেছে শিক্ষা বিভাগের বড় কর্মকর্তারা। শিক্ষকরা কিছুটা ভয়ে আছে। কি ভুল না কি ভুল হয়। কোন ভুল ধরেন।
এর মধ্যে বড় একটা কান্ড ঘটে গেলো। সবার সামনেই ওই কলেজের এক মহিলা শিক্ষকের পা ধরে সালাম করে বসে ওই বড় কর্মকর্তাদের একজন। সবাই থতমত খেয়ে যায়।
: ম্যাডাম, আপনার হয়ত আমার কথা মনে নেই। আমার এ পর্যায়ে আসার পেছনে আপনার অনেক বড় অনুপ্রেরণা আছে। বান্দরবানের একটি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম। অন্যদের তাচ্ছিল্যের কারণে মন খারাপ থাকতো। হোস্টেলে আপনি অনেক কিছু বদলে দিয়েছিলেন। অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ার পরও আপনার ক্লাস করতে চেয়েছিলাম। আপনাকে দেখে স্বপ্ন দেখতাম আপনার মত হবো।
ম্যাডামের মনে পড়ে। তার চোখে পানির ঝলক। তিনি চোখ কচলাতে থাকেন।
ফেসবুকে লিংক
হোস্টেলের সিস্টেমগুলো কেমন যেন! একবার হোস্টেলের রান্না ঘরে যে মহিলা দায়িত্ব পালন করে তাকে বলেছিল, আন্টি ঝালটা আরেকটু কম দিয়েন।
তা শুনে সে মহিলা এমন একটা ভাব নিলো যাতে মনে হতে পারে অনেক বড় একটা অপরাধের কথা সে বলে ফেলেছে।
"শুধু তোমার কথা ভাবলেতো হোস্টেল চলবে না। এখানে আরো মেয়ে আছে।"
কথাটা শুনে নীরার কান্না চলে আসলো। ওর বাবা নেই। বাবা না থাকলে যে কত অসহায় হয়ে থাকতে হয়।
টিচাররাও হোস্টেলে এসে খায়। একদিকে নিজেদের পড়ালেখার চাপ। অন্যদিকে টিচারদের প্লেটে ভাত বেড়ে দেয়, তরকারি বাটি নিয়ে যাওয়া, পানির গ্লাস রেডি করে দেয়া সবই তাদেরই করতে হয়। অন্যরা ফাঁকি দেয় বিভিন্ন অজুহাতে। নীরাকেই বেশিরভাগ দিন সামলাতে হয়।
এসময় কলেজে যোগ দেয় নতুন এক ম্যাডাম। সায়মা ম্যাডাম নামে সবাই ডাকে। ব্যাবসা বিভাগের টিচার।
সে সায়মা ম্যাডাম হোস্টেলে থাকেন। তাকে হোস্টেলের দায়িত্ব নিতে অনুরোধ জানানো হয়। সায়মা ম্যাডাম বলেন, আমি হলে থেকে লেখা পড়া করেছি। ওদের কষ্টটা বুঝি। ওদের কাছ থেকে তোলা টাকা অন্য খাতে ব্যয় হবে, কমিটির শিক্ষকরা তার একটা অংশ নিবেন এসব আমি করতে পারবো না। তাই দায়িত্ব নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। এখানে রশিদ ছাড়া টাকা নেয়া হয়। এগুলো নিয়মে আনা উচিত।
আর আমি খেয়াল করেছি, যে রান্না করে সেও হোস্টেল শিক্ষার্থীদের ঝাড়ি দেয়। ওরা নিশ্চয় এখানে ঝাড়ি খেতে আসেনি। এগুলো কেন চলবে। কত্তবড় সাহস শিক্ষার্থীদের ঝাড়ি দেয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী।
আমি বুঝি না, টিচারদের খাবার দাবার শিক্ষার্থীদের দিয়ে দিতে হবে কেন। যারা দায়িত্বে আছে তারা তো দিতে পারে। আমিতো নিজে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে আসি। খাওয়ার প্লেটটা ধুয়ে রাখি। আমার খাওয়া শেষ হওয়া প্লেটটা অন্য কারো ধুবে এটা ভাবতেই তো অস্বস্তি লাগে।
সায়মা ম্যাডাম আসার পর হোস্টেলের বেশ কিছু নিয়ম পরিবর্তন হয়। নীরার আফসোস হয়, ম্যাডামটা কেন যে ব্যবসা শাখার শিক্ষক, মানবিকের হলে কি সমস্যা ছিল। সুযোগ থাকলে নিজের বিভাগ পরিবর্তন করে ফেলতো, সেটা এখন সম্ভব না।
ম্যাডামকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখে নীরা। ইচ্ছে হয় গিয়ে বলতে, একটা মানুষ কেমনে এত ভালো হয়।
নিজের মনমরা ভাবটা অনেকটা কমে গেছে এ ম্যাডাম আসার পর। অনুপ্রেরণা পায় বড় কিছু হওয়ার।
একদিন সাহস করে ম্যাডামকে গিয়ে বলে, ম্যাডাম আমি আপনার ক্লাস করতে চাই।
: তুমি মানবিকের ছাত্রী। আমার ক্লাস কেন করবে।
মন খারাপ হয় নীরার। এটা যেন ম্যাডাম বুঝে ফেলেন। সুন্দর করে হেসে বলেন, আজ তো ওদের থেকে পরীক্ষা নেয়ার কথা। যেদিন লেকচার ক্লাস থাকবে। সেদিন তোমাকে বলবো। ঠিক আছে?
নীরার তখনি ম্যাডামের পা ধরে সালাম করতে ইচ্ছা করে।
++++++++++++++++++++
১৪ বছর পর.......
একটা কলেজে পরিদশর্নে এসেছে শিক্ষা বিভাগের বড় কর্মকর্তারা। শিক্ষকরা কিছুটা ভয়ে আছে। কি ভুল না কি ভুল হয়। কোন ভুল ধরেন।
এর মধ্যে বড় একটা কান্ড ঘটে গেলো। সবার সামনেই ওই কলেজের এক মহিলা শিক্ষকের পা ধরে সালাম করে বসে ওই বড় কর্মকর্তাদের একজন। সবাই থতমত খেয়ে যায়।
: ম্যাডাম, আপনার হয়ত আমার কথা মনে নেই। আমার এ পর্যায়ে আসার পেছনে আপনার অনেক বড় অনুপ্রেরণা আছে। বান্দরবানের একটি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম। অন্যদের তাচ্ছিল্যের কারণে মন খারাপ থাকতো। হোস্টেলে আপনি অনেক কিছু বদলে দিয়েছিলেন। অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী হওয়ার পরও আপনার ক্লাস করতে চেয়েছিলাম। আপনাকে দেখে স্বপ্ন দেখতাম আপনার মত হবো।
ম্যাডামের মনে পড়ে। তার চোখে পানির ঝলক। তিনি চোখ কচলাতে থাকেন।
ফেসবুকে লিংক