প্রক্সি দিয়ে ফেসবুক চালানো হচ্ছে। একটা সময় টিউশনির ক্ষেত্রে প্রক্সি
ব্যাপারটা চালু ছিল। বন্ধু আবীর একটা ইন্টারভিউ দিতে ঢাকা যাবে। যাওয়ার সময়
অনুরোধ করে যে কয়দিন সে থাকবে না, সে কয়দিন যাতে ওর একটি টিউশনি আমি করে
দিই।
হাতে তেমন কাজ ছিল না। ওর থেকে শুনতাম বিভিন্ন ভালো ভালো নাস্তা দেয়। এ শহরে আত্মীয় বলতে কেউ নেই। হয় নিজে বানিয়ে খেতে হয় নাহয় বাহিরে হোটেল থেকে কিনে খাওয়া। বাসার খাবারের স্বাদ ভুলে যেতে বসেছি। টিউশনিতে গেলে খাওয়া যাবে এ ব্যাপারটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ধরে তাই রাজি হয়ে গেলাম।
তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে ছেলেটি। নাম অনিক। বেশ মেধাবী। পড়াতে তেমন বেশি কষ্ট নেই। সমস্যা একটাই বেশি কথা বলে। ক্রিকেটারের গল্প, ফুটবলারের গল্প, গেমিং রেসের গল্প।
মাঝে মাঝে গল্প থামিয়ে দিয়ে আবার পড়া লেখার কথা বলতে হয়।
: আচ্ছা এ লেখাটি শেষ করে তারপর মাশরাফির গল্প শুনবো। ঠিক আছে?
: জ্বী স্যার।
: শুনো আমাকে স্যার বলার দরকার নেই। আমি তো তোমাকে অল্প কয়েকদিন দেখাবো। ভাইয়া বললেই হবে।
এটা শুনে ছেলেটি হাসে।
: হাসছো যে?
: এম্নেই।
: আচ্ছা তাহলে হাসো।
ছেলেটির হাসি বাড়ে। : ভাইয়া আপনি পুরাই অন্যরকম। স্যার হাসলে রাগ করতো। আর আপনি উল্টা হাসতে বলেন। ইশ আপনি যদি আমাকে সবসময় পড়াতেন তাহলে আমি অনেক হাসতাম।
আমি হেসে উঠি। তোমার আবীর স্যার জানলে আমার খবর করে ছাড়বে।
চা এনে দেয়া হয়, সাথে কেক। বাসায় বানানো কেক।
: চায়ে এত মিস্টি যে! পুরাই সিরাপ মনে হচ্ছে।
: আবীর স্যার চায়ে চিনি বেশি খান। তাই। স্যার এক কাজ করেন। পানি মিশায় দেন চায়ে। চিনির স্বাদ কমে যাবে।
আমি জোরে হেসে উঠি। : তুমি তো অনেক দুষ্টু।
পরের দিন যাওয়ার পর দেখি কিছুটা নিশ্চুপ অনিক।
: কি হলো, আজ এত চুপচাপ যে?
: আপু বকেছে। বলেছে পড়ার সময় এত হাসাহাসির কি আছে? পড়ার সময় পড়া। আপুর নাকি ডিস্টার্ব হয় হাসি শুনলে। আর একটা খারাপ কথা বলেছে। আপনাকে বলা যাবে না।
: কি এমন কথা বলেছে যে আমাকে বলা যাবে না।
: বললে আপনি কষ্ট পাবেন। তাই বলব না।
: কষ্ট পাবো না তুমি বলো।
: আপু বলেছে, আপনার হাসি নাকি কুৎসিত! খুব কুৎসিত। মানুষ এত বিশ্রীভাবে হাসে কেমনে।
: তাই বুঝি?
অনিক মাথা নাড়ে। আপনার খারাপ লাগছে না?
: খারাপ লাগবে কেন? টিভিতে রোবট দেখো না! ওরা হাসতে পারে?
: না, হাসতে পারে না।
: তোমার আপু হচ্ছে রোবট। তাই সে হাসি পছন্দ করে না। তার কাছে হাসি খারাপ লাগে। যারা রোবট তারা নিজেরাও হাসে না, অন্যরা হাসলেও বিরক্ত হয়। আসলে তারা মানুষ না রোবট। পুরাই রোবট।
: ভাইয়া আপনি ঠিক বলেছেন। আপু নিজেও হাসে না। আপনি কিভাবে বুঝে গেলেন ও রোবট।
: এখন রোবট নিয়ে আলোচনা বাদ। অঙ্ক বইটা নাও।
তৃতীয় দিনটা এমন ভয়ঙ্কর হবে তা আগে কল্পনা করি নাই।
অনিকের বোনটা এসে হাজির। ছিমছাম গড়নের। চুল বেনী করা। মিস্টি একটা ভাব চেহারায়। ঠোটের ওপরের দিকে তিল আছে। তবে চেহারায় রাগী ভাব নিয়ে আছে। হয়ত কোথাও বের হতে যাচ্ছে। তার আগে কিছু বলে যাবে।
: আপনার তো সাহস কম না। আমার ভাইকে বলেছেন, আমি রোবট। কালকে থেকে ও আমাকে রোবট ডাকছে।
আমি অনিকের দিকে তাকাই। অনিক বলে, ঠিকই তো রোবটই। তুমি একটা রোবট।
: দিবো একটা মাইর।
ভাই বোনের ব্যাপার দেখি। আমি বলি, অনিক রোবট ডাকার দরকার নেই।
অনিক মাথা নাড়ে আর হাসে।
মেয়েটিকে বলি, আপনি একটু হাসেন। যে হাসে সে রোবট না। আপনি হাসলে অনিক আর রোবট ডাকতে পারবে না। সহজ সমাধান।
: আপনি বললেই হাসবো? আগের স্যারটাই তো ভালো ছিল। কি এক আজেবাজে লোক পাঠালো। কাকে কিভাবে কি বলতে হয় এই ম্যানারই জানে না। যত্তসব!
এটা শুনে মন প্রচন্ড খারাপ হলো। কিছু বললাম না। সেদিন যা যা পড়ার পড়িয়ে চুপচাপ চলে আসলাম।
আর একদিন পড়ালেই হবে। তার পরের দিনই বন্ধু আবীর চলে আসবে। আর পড়াতে হবে না। ভাবলাম না যাই। এদিন মিস দিই। আবীরের এত অনুরোধ করে গেছে তাই না গিয়ে পারলাম না।
গেলাম। আজও কোন বাড়তি কথা বললাম না।
ঠিকঠাকভাবে সব পড়ালাম।
চা এলো। সাথে ধুয়া উঠা নুডলস।
চুপচাপ খেয়ে নিলাম।
: ভাইয়া কাল থেকে তো আর আসবেন না আপনি। তাই না?
: হা।
: আপু আপনাকে একটা কথা বলতে বলেছে।
: তার কথা বাদ দাও।
: কিন্তু বলতে হবে যে।
: কি।
: নুডলসটা কেমন হয়েছে?
: ভালো হয়েছে।
: নুডলস খাওয়ার পর পরই এটা জিজ্ঞেস করে নিতে বলেছে।
: হুম।
: তাহলে আজ উঠি। ভালো থাকবে। তোমাকে পড়িয়ে ভালো লাগছে। তুমি অনেক ভালো একটা ছেলে।
: আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করতে বলেছেতো।
: আবার কি কথা?
: রোবট কি নুডলস বানাতে পারে? এটা জিজ্ঞেস করতে বলেছে।
: না, তা কেন পারবে! পারে না।
: আপু কিচেনে যায় না। আজ কিচেনে গিয়ে নিজেই নুডলস বানিয়েছে। আম্মুতো পুরা অবাক। আমার যতটুকু মনে হয়েছে আপু আপনাকে পছন্দ করে। তাই নিজ হাতে নুডলস বানিয়ে খাইয়েছে।
আমার হাসি হাসে। কিছু বলি না। গম্ভীর মুখ করে রাখি। সব আবেগে ভাসতে নেই। আমি উঠতেই দেখি পর্দার ওদিকে কেউ একজন সরার শব্দ। আমাদের কথা নিশ্চয় শুনতেছিল।
যাওয়ার সময় শুধু শুনলাম, ওপাশ থেকে বলা হচ্ছে। অনিক, তুই তো আমাকে রোবট বলতি। এখন তো দেখা যাচ্ছে, তোর নতুন স্যারই রোবট। হাসতেই পারে না। পুরাই রোবট। মুখ গোমরা একটা রোবট!
ফেসবুকে : রোবট
হাতে তেমন কাজ ছিল না। ওর থেকে শুনতাম বিভিন্ন ভালো ভালো নাস্তা দেয়। এ শহরে আত্মীয় বলতে কেউ নেই। হয় নিজে বানিয়ে খেতে হয় নাহয় বাহিরে হোটেল থেকে কিনে খাওয়া। বাসার খাবারের স্বাদ ভুলে যেতে বসেছি। টিউশনিতে গেলে খাওয়া যাবে এ ব্যাপারটা অতি গুরুত্বপূর্ণ ধরে তাই রাজি হয়ে গেলাম।
তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে ছেলেটি। নাম অনিক। বেশ মেধাবী। পড়াতে তেমন বেশি কষ্ট নেই। সমস্যা একটাই বেশি কথা বলে। ক্রিকেটারের গল্প, ফুটবলারের গল্প, গেমিং রেসের গল্প।
মাঝে মাঝে গল্প থামিয়ে দিয়ে আবার পড়া লেখার কথা বলতে হয়।
: আচ্ছা এ লেখাটি শেষ করে তারপর মাশরাফির গল্প শুনবো। ঠিক আছে?
: জ্বী স্যার।
: শুনো আমাকে স্যার বলার দরকার নেই। আমি তো তোমাকে অল্প কয়েকদিন দেখাবো। ভাইয়া বললেই হবে।
এটা শুনে ছেলেটি হাসে।
: হাসছো যে?
: এম্নেই।
: আচ্ছা তাহলে হাসো।
ছেলেটির হাসি বাড়ে। : ভাইয়া আপনি পুরাই অন্যরকম। স্যার হাসলে রাগ করতো। আর আপনি উল্টা হাসতে বলেন। ইশ আপনি যদি আমাকে সবসময় পড়াতেন তাহলে আমি অনেক হাসতাম।
আমি হেসে উঠি। তোমার আবীর স্যার জানলে আমার খবর করে ছাড়বে।
চা এনে দেয়া হয়, সাথে কেক। বাসায় বানানো কেক।
: চায়ে এত মিস্টি যে! পুরাই সিরাপ মনে হচ্ছে।
: আবীর স্যার চায়ে চিনি বেশি খান। তাই। স্যার এক কাজ করেন। পানি মিশায় দেন চায়ে। চিনির স্বাদ কমে যাবে।
আমি জোরে হেসে উঠি। : তুমি তো অনেক দুষ্টু।
পরের দিন যাওয়ার পর দেখি কিছুটা নিশ্চুপ অনিক।
: কি হলো, আজ এত চুপচাপ যে?
: আপু বকেছে। বলেছে পড়ার সময় এত হাসাহাসির কি আছে? পড়ার সময় পড়া। আপুর নাকি ডিস্টার্ব হয় হাসি শুনলে। আর একটা খারাপ কথা বলেছে। আপনাকে বলা যাবে না।
: কি এমন কথা বলেছে যে আমাকে বলা যাবে না।
: বললে আপনি কষ্ট পাবেন। তাই বলব না।
: কষ্ট পাবো না তুমি বলো।
: আপু বলেছে, আপনার হাসি নাকি কুৎসিত! খুব কুৎসিত। মানুষ এত বিশ্রীভাবে হাসে কেমনে।
: তাই বুঝি?
অনিক মাথা নাড়ে। আপনার খারাপ লাগছে না?
: খারাপ লাগবে কেন? টিভিতে রোবট দেখো না! ওরা হাসতে পারে?
: না, হাসতে পারে না।
: তোমার আপু হচ্ছে রোবট। তাই সে হাসি পছন্দ করে না। তার কাছে হাসি খারাপ লাগে। যারা রোবট তারা নিজেরাও হাসে না, অন্যরা হাসলেও বিরক্ত হয়। আসলে তারা মানুষ না রোবট। পুরাই রোবট।
: ভাইয়া আপনি ঠিক বলেছেন। আপু নিজেও হাসে না। আপনি কিভাবে বুঝে গেলেন ও রোবট।
: এখন রোবট নিয়ে আলোচনা বাদ। অঙ্ক বইটা নাও।
তৃতীয় দিনটা এমন ভয়ঙ্কর হবে তা আগে কল্পনা করি নাই।
অনিকের বোনটা এসে হাজির। ছিমছাম গড়নের। চুল বেনী করা। মিস্টি একটা ভাব চেহারায়। ঠোটের ওপরের দিকে তিল আছে। তবে চেহারায় রাগী ভাব নিয়ে আছে। হয়ত কোথাও বের হতে যাচ্ছে। তার আগে কিছু বলে যাবে।
: আপনার তো সাহস কম না। আমার ভাইকে বলেছেন, আমি রোবট। কালকে থেকে ও আমাকে রোবট ডাকছে।
আমি অনিকের দিকে তাকাই। অনিক বলে, ঠিকই তো রোবটই। তুমি একটা রোবট।
: দিবো একটা মাইর।
ভাই বোনের ব্যাপার দেখি। আমি বলি, অনিক রোবট ডাকার দরকার নেই।
অনিক মাথা নাড়ে আর হাসে।
মেয়েটিকে বলি, আপনি একটু হাসেন। যে হাসে সে রোবট না। আপনি হাসলে অনিক আর রোবট ডাকতে পারবে না। সহজ সমাধান।
: আপনি বললেই হাসবো? আগের স্যারটাই তো ভালো ছিল। কি এক আজেবাজে লোক পাঠালো। কাকে কিভাবে কি বলতে হয় এই ম্যানারই জানে না। যত্তসব!
এটা শুনে মন প্রচন্ড খারাপ হলো। কিছু বললাম না। সেদিন যা যা পড়ার পড়িয়ে চুপচাপ চলে আসলাম।
আর একদিন পড়ালেই হবে। তার পরের দিনই বন্ধু আবীর চলে আসবে। আর পড়াতে হবে না। ভাবলাম না যাই। এদিন মিস দিই। আবীরের এত অনুরোধ করে গেছে তাই না গিয়ে পারলাম না।
গেলাম। আজও কোন বাড়তি কথা বললাম না।
ঠিকঠাকভাবে সব পড়ালাম।
চা এলো। সাথে ধুয়া উঠা নুডলস।
চুপচাপ খেয়ে নিলাম।
: ভাইয়া কাল থেকে তো আর আসবেন না আপনি। তাই না?
: হা।
: আপু আপনাকে একটা কথা বলতে বলেছে।
: তার কথা বাদ দাও।
: কিন্তু বলতে হবে যে।
: কি।
: নুডলসটা কেমন হয়েছে?
: ভালো হয়েছে।
: নুডলস খাওয়ার পর পরই এটা জিজ্ঞেস করে নিতে বলেছে।
: হুম।
: তাহলে আজ উঠি। ভালো থাকবে। তোমাকে পড়িয়ে ভালো লাগছে। তুমি অনেক ভালো একটা ছেলে।
: আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করতে বলেছেতো।
: আবার কি কথা?
: রোবট কি নুডলস বানাতে পারে? এটা জিজ্ঞেস করতে বলেছে।
: না, তা কেন পারবে! পারে না।
: আপু কিচেনে যায় না। আজ কিচেনে গিয়ে নিজেই নুডলস বানিয়েছে। আম্মুতো পুরা অবাক। আমার যতটুকু মনে হয়েছে আপু আপনাকে পছন্দ করে। তাই নিজ হাতে নুডলস বানিয়ে খাইয়েছে।
আমার হাসি হাসে। কিছু বলি না। গম্ভীর মুখ করে রাখি। সব আবেগে ভাসতে নেই। আমি উঠতেই দেখি পর্দার ওদিকে কেউ একজন সরার শব্দ। আমাদের কথা নিশ্চয় শুনতেছিল।
যাওয়ার সময় শুধু শুনলাম, ওপাশ থেকে বলা হচ্ছে। অনিক, তুই তো আমাকে রোবট বলতি। এখন তো দেখা যাচ্ছে, তোর নতুন স্যারই রোবট। হাসতেই পারে না। পুরাই রোবট। মুখ গোমরা একটা রোবট!
ফেসবুকে : রোবট