নাফিসের চাকরিটা
হঠাৎ করে পাওয়া। বড় অঙ্কের বেতন। এ অল্প বয়সে এত টাকা কি করবে তা নিয়ে মাঝে
মাঝে ধাধায় পড়ে যায় সে। তার একটা বন্ধু সার্কেল আছে। কিছু হলেই ট্রিট চায়।
ট্রিট দিতে নাফিসের কোন আপত্তি নেই। দেয়াই হয়। তাতে কিছু টাকা কমে। হাতে এতগুলো টাকা থাকলে অস্বস্তি হয়। কমলেই ভালো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্রিট যখন দেয় নিজেকে ওর গাভী মনে হয়। ছোটখাটো কিছু হলেই ট্রিট দেয়ার আব্দার ধরে। আর প্রতিবারই তার কাছে নিজেকে গাভী মনে হয়। যেন তার কাজই এটা। ট্রিট দেয়া।
যদিও ওপর দিয়ে মুখে হাসি রেখেই সে অংশ নেয়। ইতোমধ্যে কয়েকটা মেয়েও খুব সঙ্গ চাচ্ছে। তাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে চেক ইন দেয়। নীলা, ফারিয়া, নাইমা এদের সাথে বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছে। যে কেউ দেখলে ভাববে ওদের মধ্যে অনেক বেশি ভালো বন্ধুত্ব।
রাত সাড়ে এগারটায় ফোন : দোস্ত, নতুন একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছে। চল সেখানে একদিন ট্রাই করি।
: কখন যেতে চাচ্ছিস?
: কালকেই চল।
: ঠিক আছে। অফিসের পর ফোন দিবো।
: তুই এত ভালো কেন?
পরের দিন রেস্টুরেন্টে যায়। নাইমা রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে এমন সেলফি তুলে ফেসবুকে শেয়ার দেয়।
রাতেই নীলার ফোন।
: খুব তো ঘুরতেছো। খাচ্ছো।
: তুমি কিভাবে জানলে?
: নাইমা পোস্ট দিলো। তোমাকেও তো ট্যাগ করেছে।
: ও ফেসবুকে ঢোকা হয়নি।
: নাইমাই তোমার সবচেয়ে আপন তাই না?
: একথা কেন আসতেছে?
: শুধু নাইমাকেই খাওয়াতে নিয়ে যাও। কিছু বলোও না।
: ঠিক আছে কাল তুমি আসিও।
: কোনটাতে আসবো?
: তোমার যেটাতে ইচ্ছে। চারটার পর আমাকে বলে দিলেই হবে।
: তুমি আসলেই অনেক ভালো একটা ছেলে।
নাফিস কিছু বলে না। সে কাজ করতে গিয়ে দেখেছে এক এক জনের কাছে ভালোর সংজ্ঞা এক এক রকম। বেশির ভাগ ভালোর সংজ্ঞাই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট।
নাফিসের খালার রক্তের প্রয়োজন হয় একদিন। ডেলিভারি হবে।
খালুকে নাফিস বলে দেয়, আঙ্কেল আপনি কোন টেনশন নিবেন না। রক্তের ব্যবস্থা আমি করছি। আপনি অন্য দিকগুলো দেখেন। রক্তের ব্যাপারটা আমার ওপর ছাড়েন।
খালু পায়চারি করতে থাকেন। ঠিক সময়ে রক্ত না যোগাড় হলে সমস্যা হবে। তবে নাফিস অনেকটা সিরিয়াস ধরণের। বয়স অল্প হলেও যে কাজই করে সিরিয়াস। তাই দুশ্চিন্তা থাকলেও আশ্বস্ত হন।
হাসপাতাল থেকে মোবাইলে রক্তের গ্রুপ জানিয়ে নাফিস স্ট্যাটাস দেয়। আগামীকাল সকালে ... গ্রুপের রক্ত লাগবে।
নাফিসের অনেক বন্ধু। ইতোমধ্যে চার হাজারের ওপর হয়ে গেছে। তার বিশ্বাস কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন আসবে। রক্তের যোগাড় হয়ে যাবে। অনেকগুলো লাইক আসে। কিন্তু রক্তের জন্য কেউ আর ফোন দেয় না।
একটু পর পর খালু এসে জিজ্ঞাসা করে, নাফিস রক্তের কোন ব্যবস্থা হলো?
: এইতো। হয়ে যাবে। আমার ফেসবুকে অনেক ফ্রেন্ড। পেয়ে যাবো।
: অবশ্যই পাবিতো?
: আরে আপনি টেনশন নিয়েন নাতো। কত বার এভাবে রক্তের যোগাড় হয়েছে। গত মাসে এমন ফেসবুকে রক্তের পোস্ট দেখে নিজেই রক্ত দিয়ে আসলাম।
খালু আবার কেবিনে যান। নাফিস বসে আছে হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে ভারী সোফায়। তিন ঘন্টা হয়ে গেছে। অথচ একটা ফোনও নেই। তার লজ্জা লাগছে। খালুকে কথা দিয়ে দিয়েছে। কেমন একটা অসহায় অসহায় বোধ লাগছে। ফেসবুকে অপরিচিত বন্ধুর কথা বাদই। পরিচিত জনই তো অনেকে আছে। কেউ ফোন দেয়নি।
রাত এগারটার দিকেও যখন রক্তের সন্ধান হলো না। সে আরেকটি পোস্ট দিলো : সরি, .. এ গ্রুপের রক্ত চেয়ে পোস্ট দেয়াটা আমার ভুল ছিল। ভুল একারণেই কেউ একটা ফোন দিয়ে জানালো না। আমি সবার কাছে দু:খিত ডিস্টার্ব করায়।
কিছুক্ষণের মধ্যে একশ লাইক পার হয়ে গেলো। প্রথম কমেন্ট.... আমার অন্য গ্রুপ। নাহলে আমি দিতাম।
দ্বিতীয় কমেন্ট... আমি তো উত্তর বঙ্গের দিকে থাকি। ঢাকায় থাকলে আমিই চলে আসতাম।
তৃতীয় কমেন্ট.... কিছু করতে পারছি না দেখে সরি। গত সপ্তাহে আমি রক্ত দিয়েছি। এখন তো আর দিতে পারছি না।
কমেন্ট গুলো পড়ে। কিছু বলার বিষয় খুজে পায় না নাফিস। তার অসহায়ত্বই শুধুই বাড়ে। আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যে একটা আত্মবিশ্বাস ছিল তা হালকা হতে থাকে।
পঞ্চম কমেন্টটায় তাসমি নামে একটা মেয়ে কমেন্ট করে। “আমার রক্ত একই গ্রুপের। দুপুরে আমার টেস্ট পরীক্ষা আছে। সকাল নয়টার দিকে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করা যাবে? আমি না হয় রক্ত দিয়ে তারপর পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবো।”
এ কমেন্ট পড়ে চোখে পানি এসে যায় নাফিসের। এ মেয়েটির সাথে কখনো আগে তেমন কথাও হয়নি। ফ্রেন্ডলিস্টে আছে এতটুকুই!
মেয়েটি তার নাম্বার জানিয়ে দেয় মেসেজে।
নাফিস কল করে।
: আপনারতো পরীক্ষা চলছে। রক্ত দিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে তো সমস্যা হতে পারে।
: আরে! পরীক্ষার চেয়ে একটা মানুষের জীবন বড়। তার ওপর এখানে একটা না দুইটা মানুষের জীবন। পৃথিবীতে যে আসতেছে তার জীবনও।
: বাসা থেকে অনুমতি দেবে?
: না।
: তাহলে?
: আমি বাসা থেকে বলে বের হবো, আমি একটা নোট পাচ্ছি না। সেটা পরীক্ষায় আসবেই। বান্ধবীর বাসায় যেতে হবে। বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার নাম করে রক্ত দিতে চলে আসবো। সেগুলো নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। কয়টা বাজে আসতে হবে সেটা বলেন। ফিক্সড টাইম বললে আমার সুবিধা হবে।
পরে ডাক্তারের সাথে কথা বলে রাতেই তাসমিকে জানিয়ে দেয়, কয়টায় আসতে হবে।
দুপুরের দিকে পৃথিবীকে আলোকিত করে আসে নাফিসের খালাতো ভাই। এর আগেই মেয়েটি রক্ত দিয়েই চলে যায়।
সন্ধ্যাতেই তাসমিকে ফোন দেয় নাফিস। ফোন কেটে দেয় তাসমি।
মেসেজ পাঠায়। “ভাইয়া, পাশে আম্মু আছে। এখন কথা বলা সম্ভব না।“
নাফিস লেখা শুরু করে“ আমার খালাতো ভাই হয়েছে। আপনি অনেক ভালো এত বলবো না। কারণ ভালো ব্যাপারটা পুরাটাই মনে হয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। ভালো শব্দটাই আমার কেমন যেন লাগে। ফেসবুক যদি কখনো জরিপ করে জিজ্ঞেস করে, তোমার চার হাজার ফ্রেন্ডের মধ্যে কাকে এক নম্বরে রাখবে। তাহলে আমার এতটুকু চিন্তা করতে হবে না। হুট করে নামটাতে ক্লিক করে দিবো। এবং মন থেকেই। অথচ তাকে আগে কখনই চিনতাম না। ফেসবুকে ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা কেউ কেউ যে অনেক বেশি .... আচ্ছা অনেক কথা বলে ফেলতেছি। সরি। আমার আসলে অনেক ভালো লাগছে। আঙ্কেলকে মুখ বড় করে বলেছিলাম। শুধুমাত্র আপনার জন্য রাখা সম্ভব হলো। আপনাকে ধন্যবাদ।”
মেসেজটি পেয়ে তাসমির অনেক ভালো লাগে... সে শুধু লিখে পাঠায়, “সব কিছুতে ধন্যবাদ দিতে নাই। ধন্যবাদের বাহিরেও কিছু ব্যাপার থাকে।”
চার বছর পরের গল্পটা অনেক বেশি সুন্দর।
কারণ তারা এখন একসাথে থাকে। আর চমৎকার সময় কাটায়। তাসমি আর নাফিস!
নাফিসের খালাতো ভাইটার নাম রাখা হয়েছে সৌরভ। তার বয়স এখন চার বছর। সৌরভের সাথে তাসমি আর নাফিসের অনেক বেশি ভালো বন্ধুত্ব। তাসমি আপু, তাসমি আপু বলতে পাগল বাচ্চাটা।
তাসমি ও নাফিসও রেস্টুরেন্টে যায়, আড্ডা দেয়। মোবাইলটা একজনের পকেটে থাকে, অন্যজনের ব্যাগে থাকে। সময়টা শুধু তাদের। শুধুই তাদের।
সেলফি উঠায় না। ফেসবুকে চেক ইন দেয়া হয় না। তাদের আনন্দটা তাদের মাঝেই থাকে। পুরাটাই তাদের মাঝে।
ট্রিট দিতে নাফিসের কোন আপত্তি নেই। দেয়াই হয়। তাতে কিছু টাকা কমে। হাতে এতগুলো টাকা থাকলে অস্বস্তি হয়। কমলেই ভালো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ট্রিট যখন দেয় নিজেকে ওর গাভী মনে হয়। ছোটখাটো কিছু হলেই ট্রিট দেয়ার আব্দার ধরে। আর প্রতিবারই তার কাছে নিজেকে গাভী মনে হয়। যেন তার কাজই এটা। ট্রিট দেয়া।
যদিও ওপর দিয়ে মুখে হাসি রেখেই সে অংশ নেয়। ইতোমধ্যে কয়েকটা মেয়েও খুব সঙ্গ চাচ্ছে। তাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে চেক ইন দেয়। নীলা, ফারিয়া, নাইমা এদের সাথে বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছে। যে কেউ দেখলে ভাববে ওদের মধ্যে অনেক বেশি ভালো বন্ধুত্ব।
রাত সাড়ে এগারটায় ফোন : দোস্ত, নতুন একটা রেস্টুরেন্ট খুলেছে। চল সেখানে একদিন ট্রাই করি।
: কখন যেতে চাচ্ছিস?
: কালকেই চল।
: ঠিক আছে। অফিসের পর ফোন দিবো।
: তুই এত ভালো কেন?
পরের দিন রেস্টুরেন্টে যায়। নাইমা রেস্টুরেন্টে খাচ্ছে এমন সেলফি তুলে ফেসবুকে শেয়ার দেয়।
রাতেই নীলার ফোন।
: খুব তো ঘুরতেছো। খাচ্ছো।
: তুমি কিভাবে জানলে?
: নাইমা পোস্ট দিলো। তোমাকেও তো ট্যাগ করেছে।
: ও ফেসবুকে ঢোকা হয়নি।
: নাইমাই তোমার সবচেয়ে আপন তাই না?
: একথা কেন আসতেছে?
: শুধু নাইমাকেই খাওয়াতে নিয়ে যাও। কিছু বলোও না।
: ঠিক আছে কাল তুমি আসিও।
: কোনটাতে আসবো?
: তোমার যেটাতে ইচ্ছে। চারটার পর আমাকে বলে দিলেই হবে।
: তুমি আসলেই অনেক ভালো একটা ছেলে।
নাফিস কিছু বলে না। সে কাজ করতে গিয়ে দেখেছে এক এক জনের কাছে ভালোর সংজ্ঞা এক এক রকম। বেশির ভাগ ভালোর সংজ্ঞাই স্বার্থ সংশ্লিষ্ট।
নাফিসের খালার রক্তের প্রয়োজন হয় একদিন। ডেলিভারি হবে।
খালুকে নাফিস বলে দেয়, আঙ্কেল আপনি কোন টেনশন নিবেন না। রক্তের ব্যবস্থা আমি করছি। আপনি অন্য দিকগুলো দেখেন। রক্তের ব্যাপারটা আমার ওপর ছাড়েন।
খালু পায়চারি করতে থাকেন। ঠিক সময়ে রক্ত না যোগাড় হলে সমস্যা হবে। তবে নাফিস অনেকটা সিরিয়াস ধরণের। বয়স অল্প হলেও যে কাজই করে সিরিয়াস। তাই দুশ্চিন্তা থাকলেও আশ্বস্ত হন।
হাসপাতাল থেকে মোবাইলে রক্তের গ্রুপ জানিয়ে নাফিস স্ট্যাটাস দেয়। আগামীকাল সকালে ... গ্রুপের রক্ত লাগবে।
নাফিসের অনেক বন্ধু। ইতোমধ্যে চার হাজারের ওপর হয়ে গেছে। তার বিশ্বাস কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোন আসবে। রক্তের যোগাড় হয়ে যাবে। অনেকগুলো লাইক আসে। কিন্তু রক্তের জন্য কেউ আর ফোন দেয় না।
একটু পর পর খালু এসে জিজ্ঞাসা করে, নাফিস রক্তের কোন ব্যবস্থা হলো?
: এইতো। হয়ে যাবে। আমার ফেসবুকে অনেক ফ্রেন্ড। পেয়ে যাবো।
: অবশ্যই পাবিতো?
: আরে আপনি টেনশন নিয়েন নাতো। কত বার এভাবে রক্তের যোগাড় হয়েছে। গত মাসে এমন ফেসবুকে রক্তের পোস্ট দেখে নিজেই রক্ত দিয়ে আসলাম।
খালু আবার কেবিনে যান। নাফিস বসে আছে হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে ভারী সোফায়। তিন ঘন্টা হয়ে গেছে। অথচ একটা ফোনও নেই। তার লজ্জা লাগছে। খালুকে কথা দিয়ে দিয়েছে। কেমন একটা অসহায় অসহায় বোধ লাগছে। ফেসবুকে অপরিচিত বন্ধুর কথা বাদই। পরিচিত জনই তো অনেকে আছে। কেউ ফোন দেয়নি।
রাত এগারটার দিকেও যখন রক্তের সন্ধান হলো না। সে আরেকটি পোস্ট দিলো : সরি, .. এ গ্রুপের রক্ত চেয়ে পোস্ট দেয়াটা আমার ভুল ছিল। ভুল একারণেই কেউ একটা ফোন দিয়ে জানালো না। আমি সবার কাছে দু:খিত ডিস্টার্ব করায়।
কিছুক্ষণের মধ্যে একশ লাইক পার হয়ে গেলো। প্রথম কমেন্ট.... আমার অন্য গ্রুপ। নাহলে আমি দিতাম।
দ্বিতীয় কমেন্ট... আমি তো উত্তর বঙ্গের দিকে থাকি। ঢাকায় থাকলে আমিই চলে আসতাম।
তৃতীয় কমেন্ট.... কিছু করতে পারছি না দেখে সরি। গত সপ্তাহে আমি রক্ত দিয়েছি। এখন তো আর দিতে পারছি না।
কমেন্ট গুলো পড়ে। কিছু বলার বিষয় খুজে পায় না নাফিস। তার অসহায়ত্বই শুধুই বাড়ে। আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে যে একটা আত্মবিশ্বাস ছিল তা হালকা হতে থাকে।
পঞ্চম কমেন্টটায় তাসমি নামে একটা মেয়ে কমেন্ট করে। “আমার রক্ত একই গ্রুপের। দুপুরে আমার টেস্ট পরীক্ষা আছে। সকাল নয়টার দিকে রক্ত দেয়ার ব্যবস্থা করা যাবে? আমি না হয় রক্ত দিয়ে তারপর পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবো।”
এ কমেন্ট পড়ে চোখে পানি এসে যায় নাফিসের। এ মেয়েটির সাথে কখনো আগে তেমন কথাও হয়নি। ফ্রেন্ডলিস্টে আছে এতটুকুই!
মেয়েটি তার নাম্বার জানিয়ে দেয় মেসেজে।
নাফিস কল করে।
: আপনারতো পরীক্ষা চলছে। রক্ত দিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে তো সমস্যা হতে পারে।
: আরে! পরীক্ষার চেয়ে একটা মানুষের জীবন বড়। তার ওপর এখানে একটা না দুইটা মানুষের জীবন। পৃথিবীতে যে আসতেছে তার জীবনও।
: বাসা থেকে অনুমতি দেবে?
: না।
: তাহলে?
: আমি বাসা থেকে বলে বের হবো, আমি একটা নোট পাচ্ছি না। সেটা পরীক্ষায় আসবেই। বান্ধবীর বাসায় যেতে হবে। বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার নাম করে রক্ত দিতে চলে আসবো। সেগুলো নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। কয়টা বাজে আসতে হবে সেটা বলেন। ফিক্সড টাইম বললে আমার সুবিধা হবে।
পরে ডাক্তারের সাথে কথা বলে রাতেই তাসমিকে জানিয়ে দেয়, কয়টায় আসতে হবে।
দুপুরের দিকে পৃথিবীকে আলোকিত করে আসে নাফিসের খালাতো ভাই। এর আগেই মেয়েটি রক্ত দিয়েই চলে যায়।
সন্ধ্যাতেই তাসমিকে ফোন দেয় নাফিস। ফোন কেটে দেয় তাসমি।
মেসেজ পাঠায়। “ভাইয়া, পাশে আম্মু আছে। এখন কথা বলা সম্ভব না।“
নাফিস লেখা শুরু করে“ আমার খালাতো ভাই হয়েছে। আপনি অনেক ভালো এত বলবো না। কারণ ভালো ব্যাপারটা পুরাটাই মনে হয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। ভালো শব্দটাই আমার কেমন যেন লাগে। ফেসবুক যদি কখনো জরিপ করে জিজ্ঞেস করে, তোমার চার হাজার ফ্রেন্ডের মধ্যে কাকে এক নম্বরে রাখবে। তাহলে আমার এতটুকু চিন্তা করতে হবে না। হুট করে নামটাতে ক্লিক করে দিবো। এবং মন থেকেই। অথচ তাকে আগে কখনই চিনতাম না। ফেসবুকে ফ্রেন্ড লিস্টে থাকা কেউ কেউ যে অনেক বেশি .... আচ্ছা অনেক কথা বলে ফেলতেছি। সরি। আমার আসলে অনেক ভালো লাগছে। আঙ্কেলকে মুখ বড় করে বলেছিলাম। শুধুমাত্র আপনার জন্য রাখা সম্ভব হলো। আপনাকে ধন্যবাদ।”
মেসেজটি পেয়ে তাসমির অনেক ভালো লাগে... সে শুধু লিখে পাঠায়, “সব কিছুতে ধন্যবাদ দিতে নাই। ধন্যবাদের বাহিরেও কিছু ব্যাপার থাকে।”
চার বছর পরের গল্পটা অনেক বেশি সুন্দর।
কারণ তারা এখন একসাথে থাকে। আর চমৎকার সময় কাটায়। তাসমি আর নাফিস!
নাফিসের খালাতো ভাইটার নাম রাখা হয়েছে সৌরভ। তার বয়স এখন চার বছর। সৌরভের সাথে তাসমি আর নাফিসের অনেক বেশি ভালো বন্ধুত্ব। তাসমি আপু, তাসমি আপু বলতে পাগল বাচ্চাটা।
তাসমি ও নাফিসও রেস্টুরেন্টে যায়, আড্ডা দেয়। মোবাইলটা একজনের পকেটে থাকে, অন্যজনের ব্যাগে থাকে। সময়টা শুধু তাদের। শুধুই তাদের।
সেলফি উঠায় না। ফেসবুকে চেক ইন দেয়া হয় না। তাদের আনন্দটা তাদের মাঝেই থাকে। পুরাটাই তাদের মাঝে।