স্বপ্নগুলো হাতের মুঠো থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। নীরব দর্শক হিসাবে তা শুধু দেখা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। হোটেল বয় রাতে আর কিছু লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করতে এসেছিল। মুখে মুচকি হাসি। দরজা খুলে দিতেই জিজ্ঞেস করল, স্যার কিছু লাগবে?
একবার ভাবলাম বলি, হুম লাগবে। কিছু ঘুমের ওষুধ এনে দাও। ফার্মেসী কি বন্ধ হয়ে গেছে? যদি না হয় তাহলে কষ্ট করে দুই প্যাকেট ঘুমের ওষুধ এনে দাও। সারাজীবনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ি।
বাহিরে চাপা আওয়াজ নারী কন্ঠের। দুইজন কিংবা তার চেয়ে বেশি। ফিস ফিস করে কি যেন বলছে। এরা প্রতিদিন বাসর সাজায় নতুন পুরুষের সাথে। কেউবা না পেরে কেউবা উচ্চাবিলাসী জীবনের তাগিদে।
: স্যার কিছু বলছেন না যে, লাগবে?
বয়ের কথায় আমি বাস্তবে ফিরে আসি। বলি- নাহ লাগবে না। তবে অন্য রুম দেখো।
হতাশ মুখে বয় চলে যায়। আমি দরজা বন্ধ করে দিই। টিভি অন করি। রিমোর্ট টিপে চ্যানেল বদলাই। কিন্তু লাভ হয় না। বাংলাদেশি চ্যানেল খুজি। সারা বিশ্বের অনেক দেশের চ্যানেল আছে। শুধু বাংলাদেশের চ্যানেলই নাই। অথচ এ দেশের ডজন ডজন চ্যানেলগুলো দেশে রাত দিন দেখি আমরা। এমন স্বার্থপর কেন এরা। শুধু এক্ষেত্রে না। বাংলাদশি মুসলমান শুনলে অনেকে কপাল কুচকায়। দেখলে মনে হয় পরিচিত হয়ে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। এরা এরকম ভাবে কেন? যদি প্রয়োজন না হয় এখানে আসার মানেই হয় না।
প্রতিদিন অ্যাম্বেসিতে যাই। বাংলাদেশে পর্তুগালের অ্যাম্বেসী নাই। তাই ভারতে আসতে হলেো। এম্বেসীতে অপেক্ষায় থাকি। অফিস থেকে বলা হয়েছে আপনার ভিসা হলে জানিয়ে দেওয়া হবে। এখানে থাকতে হবে না। তারপরও থাকি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করি। এম্নেই অপেক্ষা।
অ্যাম্বেসির পাশেই মেয়েদের একটা স্কুল। ছুটি হওয়ার পর মেয়েরা দল বেঁধে বের হয়। বন্ধুরা জানলে নিশ্চিত ঠাট্টা করে বলবে ভিসার জন্য না মেয়েদের স্কুল আছে বিধায় নিয়মিত আসি। বেশ মজা করত ব্যাপারটায়। শুধু আমাকেই নয়। অনিকেও ব্যাপারটা বলে উত্তেজিত করার চেষ্টা করত।
তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে আশ্বাস দেওয়া হলেও দেওয়ার কোন নমুনা দেখা যাচ্ছে না। আমার ভাগ্য নিদারুন খারাপ। এরপরও কেমনে জানি এ স্কলারশীপটি পেয়ে গিয়েছি। অনি এড্রেস এনে দিয়ে বলেছিল, এখানটায় আবেদন করো।
: স্কলারশীপ?
:হুম।
: আমার গাধা টাইপের ছাত্র, স্কলার না। তাই এগুলোতে আবেদন করে লাভ নেই। স্কলাররাই আবেদন করুক। আমি কেন করবো।
চোখমুখ গম্ভী করে অনি বলে, আমি বলছি তাই করবে।
এ কথা শোনার পর আর কোন কথা বলতে পারি না। ওর একথা শুনলে বুকের ভিতরে কেমন যেন ব্যাথা করে। না বলার শক্তি থাকে না। সেদিনই পূরণ করেছিলাম। নিশ্চিত ছিলাম হবে না।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ওদের কাছ থেকে মেইল আসল। কোর্সের বিবরণ, ভিসা, যাওয়ার নির্দেশনা সম্বলিত কথাবার্তায় ভরপুর মেইল। আমি এম্নেই ইংরেজিতে কম বুঝি। ডিকশনারি নিয়ে বসি। একটু পর পর ডিকশনারি পাতা উল্টায়। টানা তিন ঘন্টা লাগে মেইলটির কথাবার্তা উদ্ধার করতে। টিকেটটা নিজ খরচে কাটতে হবে। তবে সেখানে গেলে বিমান ভাড়া দিয়ে দেওয়া হবে। রাত তথন ২ টা। রুমে আমি একা। রুমমেট ঢাকায় গেছে এক ইন্টারভিউ পরীক্ষা দিতে। নিজেকে স্কলার স্কলার লাগছিল। কিছু করতে ইচ্ছা করছিল এত খুশীর সংবাদ শুনে। কিন্তু কি করা। একা একা কি করা যায়?
পাকঘরে গিয়ে চুলায় গরম পানি দিয়ে এলাম চা বানানোর জন্য। বাথরুমে গিয়ে ইচ্ছামত গোসল করলাম। গোসল করার সময় মনে হচ্ছিল জীবনের হতাশাগুলো সব মুছে যাচ্ছে পানি ঢালার সাথে। এটা যতই মনে হচ্ছিল ততই পানি ঢাললাম শরীরে। চা বানিয়ে খেলাম। অনিকে জানাতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ও ঘুমে। ওর একবার ঘুম ভাঙলে আর সহজে ঘুম আসে না। তাই জাগালাম না। চারদিক পরিষ্কার করা শুরু করলাম। খাটের নিচে যত অপ্রয়োজনীয় কাগজ পত্র। সেগুলো পরিষ্কার করলাম। গোসল করার আগে পরিষ্কার করলে ভাল ছিল। কিন্তু তখন কি মনে ছিল এগুলো করতে হবে। জীবনটাকে আর এলোমেলো রাখবো না। পুরা সাজিয়ে নেবো।
পুরা রুমটিই পরিপাটি করে নিলাম। সবকিছু নতুন করে শুরু করার মিশন।
এখন মনে হচ্ছে সবটাই অযথা। আবারো আগের জীবনেই ফিরে যেতে হবে। অনির পরিবার অন্য ছেলের সাথে অনির বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে। কিন্তু অনি রাজি হয় না। পরে আমার সাথে ওর সম্পর্কের ব্যাপারটা জেনে খুব বিরক্ত হয়। এককথায় না করে দেয়। এরকম পড়ালেখায় থাকা একটা ছেলের কাছে ওনাদের মেয়ে কিছুতেই বিয়ে দেবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়ের জিদের কাছে না পারতে সম্পর্ক মেনে নেয়।
ভারতে আসছি আজ ২৭ দিন। অথচ এক সপ্তাহের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে বলা হয়েছিল। সামনের শুক্রবার অনির বিয়ে। নাহ অন্য কারো সাথে না আমার সাথে। হাতে আছে একটা দিন সময়। এর মধ্যে ভিসা না হয়। ২৭ টা দিন যে কত্ত কষ্টে গেল। একটা একটা দিন না যেন একটা একটা বছর।
অনির সাথে প্রায় প্রতিদিন কথা হয়। অনি জানায় ওর বাবা বিশাল বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। অনেককে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। পাঁচতলা সম্পূর্ণ বিল্ডিং ঝিকিমিকি বাতি লাগানো হবে।
একবার ভাবলাম বলি, হুম লাগবে। কিছু ঘুমের ওষুধ এনে দাও। ফার্মেসী কি বন্ধ হয়ে গেছে? যদি না হয় তাহলে কষ্ট করে দুই প্যাকেট ঘুমের ওষুধ এনে দাও। সারাজীবনের জন্য ঘুমিয়ে পড়ি।
বাহিরে চাপা আওয়াজ নারী কন্ঠের। দুইজন কিংবা তার চেয়ে বেশি। ফিস ফিস করে কি যেন বলছে। এরা প্রতিদিন বাসর সাজায় নতুন পুরুষের সাথে। কেউবা না পেরে কেউবা উচ্চাবিলাসী জীবনের তাগিদে।
: স্যার কিছু বলছেন না যে, লাগবে?
বয়ের কথায় আমি বাস্তবে ফিরে আসি। বলি- নাহ লাগবে না। তবে অন্য রুম দেখো।
হতাশ মুখে বয় চলে যায়। আমি দরজা বন্ধ করে দিই। টিভি অন করি। রিমোর্ট টিপে চ্যানেল বদলাই। কিন্তু লাভ হয় না। বাংলাদেশি চ্যানেল খুজি। সারা বিশ্বের অনেক দেশের চ্যানেল আছে। শুধু বাংলাদেশের চ্যানেলই নাই। অথচ এ দেশের ডজন ডজন চ্যানেলগুলো দেশে রাত দিন দেখি আমরা। এমন স্বার্থপর কেন এরা। শুধু এক্ষেত্রে না। বাংলাদশি মুসলমান শুনলে অনেকে কপাল কুচকায়। দেখলে মনে হয় পরিচিত হয়ে বিশাল ক্ষতি হয়ে গেল। এরা এরকম ভাবে কেন? যদি প্রয়োজন না হয় এখানে আসার মানেই হয় না।
প্রতিদিন অ্যাম্বেসিতে যাই। বাংলাদেশে পর্তুগালের অ্যাম্বেসী নাই। তাই ভারতে আসতে হলেো। এম্বেসীতে অপেক্ষায় থাকি। অফিস থেকে বলা হয়েছে আপনার ভিসা হলে জানিয়ে দেওয়া হবে। এখানে থাকতে হবে না। তারপরও থাকি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করি। এম্নেই অপেক্ষা।
অ্যাম্বেসির পাশেই মেয়েদের একটা স্কুল। ছুটি হওয়ার পর মেয়েরা দল বেঁধে বের হয়। বন্ধুরা জানলে নিশ্চিত ঠাট্টা করে বলবে ভিসার জন্য না মেয়েদের স্কুল আছে বিধায় নিয়মিত আসি। বেশ মজা করত ব্যাপারটায়। শুধু আমাকেই নয়। অনিকেও ব্যাপারটা বলে উত্তেজিত করার চেষ্টা করত।
তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে আশ্বাস দেওয়া হলেও দেওয়ার কোন নমুনা দেখা যাচ্ছে না। আমার ভাগ্য নিদারুন খারাপ। এরপরও কেমনে জানি এ স্কলারশীপটি পেয়ে গিয়েছি। অনি এড্রেস এনে দিয়ে বলেছিল, এখানটায় আবেদন করো।
: স্কলারশীপ?
:হুম।
: আমার গাধা টাইপের ছাত্র, স্কলার না। তাই এগুলোতে আবেদন করে লাভ নেই। স্কলাররাই আবেদন করুক। আমি কেন করবো।
চোখমুখ গম্ভী করে অনি বলে, আমি বলছি তাই করবে।
এ কথা শোনার পর আর কোন কথা বলতে পারি না। ওর একথা শুনলে বুকের ভিতরে কেমন যেন ব্যাথা করে। না বলার শক্তি থাকে না। সেদিনই পূরণ করেছিলাম। নিশ্চিত ছিলাম হবে না।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ওদের কাছ থেকে মেইল আসল। কোর্সের বিবরণ, ভিসা, যাওয়ার নির্দেশনা সম্বলিত কথাবার্তায় ভরপুর মেইল। আমি এম্নেই ইংরেজিতে কম বুঝি। ডিকশনারি নিয়ে বসি। একটু পর পর ডিকশনারি পাতা উল্টায়। টানা তিন ঘন্টা লাগে মেইলটির কথাবার্তা উদ্ধার করতে। টিকেটটা নিজ খরচে কাটতে হবে। তবে সেখানে গেলে বিমান ভাড়া দিয়ে দেওয়া হবে। রাত তথন ২ টা। রুমে আমি একা। রুমমেট ঢাকায় গেছে এক ইন্টারভিউ পরীক্ষা দিতে। নিজেকে স্কলার স্কলার লাগছিল। কিছু করতে ইচ্ছা করছিল এত খুশীর সংবাদ শুনে। কিন্তু কি করা। একা একা কি করা যায়?
পাকঘরে গিয়ে চুলায় গরম পানি দিয়ে এলাম চা বানানোর জন্য। বাথরুমে গিয়ে ইচ্ছামত গোসল করলাম। গোসল করার সময় মনে হচ্ছিল জীবনের হতাশাগুলো সব মুছে যাচ্ছে পানি ঢালার সাথে। এটা যতই মনে হচ্ছিল ততই পানি ঢাললাম শরীরে। চা বানিয়ে খেলাম। অনিকে জানাতে ইচ্ছা করছে। কিন্তু ও ঘুমে। ওর একবার ঘুম ভাঙলে আর সহজে ঘুম আসে না। তাই জাগালাম না। চারদিক পরিষ্কার করা শুরু করলাম। খাটের নিচে যত অপ্রয়োজনীয় কাগজ পত্র। সেগুলো পরিষ্কার করলাম। গোসল করার আগে পরিষ্কার করলে ভাল ছিল। কিন্তু তখন কি মনে ছিল এগুলো করতে হবে। জীবনটাকে আর এলোমেলো রাখবো না। পুরা সাজিয়ে নেবো।
পুরা রুমটিই পরিপাটি করে নিলাম। সবকিছু নতুন করে শুরু করার মিশন।
এখন মনে হচ্ছে সবটাই অযথা। আবারো আগের জীবনেই ফিরে যেতে হবে। অনির পরিবার অন্য ছেলের সাথে অনির বিয়ের ব্যাপারে কথা বলে। কিন্তু অনি রাজি হয় না। পরে আমার সাথে ওর সম্পর্কের ব্যাপারটা জেনে খুব বিরক্ত হয়। এককথায় না করে দেয়। এরকম পড়ালেখায় থাকা একটা ছেলের কাছে ওনাদের মেয়ে কিছুতেই বিয়ে দেবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়ের জিদের কাছে না পারতে সম্পর্ক মেনে নেয়।
ভারতে আসছি আজ ২৭ দিন। অথচ এক সপ্তাহের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে বলা হয়েছিল। সামনের শুক্রবার অনির বিয়ে। নাহ অন্য কারো সাথে না আমার সাথে। হাতে আছে একটা দিন সময়। এর মধ্যে ভিসা না হয়। ২৭ টা দিন যে কত্ত কষ্টে গেল। একটা একটা দিন না যেন একটা একটা বছর।
অনির সাথে প্রায় প্রতিদিন কথা হয়। অনি জানায় ওর বাবা বিশাল বড় করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। অনেককে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। পাঁচতলা সম্পূর্ণ বিল্ডিং ঝিকিমিকি বাতি লাগানো হবে।