আমার ছোট বোনকে একদিন জুত আবিষ্কারের গল্প শুনাই। ও যে স্কুলে পড়ে ঐখানে স্কুল ড্রেসের সাথে জুতাও পড়তে হয়। ওর সকল আপত্তি ঐ জুতা নিয়ে। স্কুল জুতা দুই চোখে দেখতে পারে না। আমার গল্প মন দিয়ে শোনে। শেষে বলে, আচ্ছা স্যান্ডেল আবিষ্কার করছে। ঠিক আছে। আবার জুতা আবিষ্কার করতে গেল কেন?
আমি প্রশ্নের উত্তর দিতে পছন্দ করি। বলি, জুতা স্যান্ডেলের চেয়ে বেশি নিরাপদ।
: কেমন?
আমি বলি, ধর স্যান্ডেল পড়ে হাটছিস। মাটিতে পিপঁড়া, জোক থাকলে সহজে কামড়াতে পারবে। জুতা পড়া থাকলে পিপড়া, জোক সহজে আক্রমণ করতে পারে না।
ও আমার কথায় মাথা নাড়ে। অথ্যাৎ আমার কথা মেনে নিয়েছে।
শুধু মাথা নেড়ে ক্ষান্ত হয় না। মুখ খোলে কিছু বলার জন্য।
: বনজঙ্গলে যারা থাকে ওদের জন্য জুতা অবশ্যই পরা দরকার। ঐখানে সাপ জোঁকের ভয়। কিন্তু আমি তো কোন বনজঙ্গলে পড়ি না। স্কুলে পড়ি। আর আমাদের স্কুল জোঁকের ঘাঁটিও না। তাহলে আমাদের জুতা পড়তে হবে কেন?
সুন্দর প্রশ্ন।
: তোদের স্কুলে সাদা জুতা নির্ধারণ করে দিয়েছে যাতে সবাই যেন একই রকম জুতা পড়ে। এক এক জন বৈচিত্র পূর্ণ জুতা পড়লে বিশ্রী দেখাতো। অথ্যাৎ শৃঙ্খলা বজার রাখার জন্য জুতা পড়তে হয়। দেখছ না আর্মিরা কি সুন্দর জুতা পড়ে লেফট রাইট করে?
: আর্মিরা পড়ে, কেননা ওদের তা দরকার আছে। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে ওদের অংশগ্রহণ করতে হয়। যুদ্ধে যেতে হয়। জুতা না পড়লে ওদের চলে না। কিন্তু আমরাতো আর ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করি না। আমাদের জুতা পড়ার কোন কারণ দেখি না। জুতা পড়লে পা গরমে ঘেমে যায়। কি বিরক্তিকর। অনেক কষ্টের। আর ঐইযে সবার একই রকমের কথা বললা। সেটা টো জুতা না পড়েও হওয়া যায়। সবাইকে একই রকম স্যান্ডেল পড়ে আসতে বললেই হলো। সবাই একই রকম পড়বে।
এক নাগাড়ে বিজ্ঞের মত কথা গুলো বলে ফেলে ও।
স্কুলে যাওয়ার সময় ও জুতা পড়ে যায়। ব্যাগের ভিতর নিয়ে যায় এক জোড়া স্যান্ডেল। ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথে জুতা খুলে ব্যাগে রেখে দেয়। স্যান্ডেল পড়ে। আবার ছুটির সময় জুতা পড়ে বের হয়।
আসলে গরম কালে জুতা পড়া অনেক বেশি কষ্টের। আর যেসব স্কুলে দরিদ্র ঘরের ছেলে মেয়েরা পড়ে তাদের জন্য জুতা নেওয়া বেশ কষ্ট সাধ্য। কেননা এক জুতা দিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ হয় না। সময়ের সাথে পায়ের আকৃতি বাড়ে। জুতাতো আর বাড়ে না। জুতার দামও বেশি। নতুন জুতা নিতে না পেরে ছোট জুতা গুলো পড়েই স্কুলে থাকতে হয়। পায়ের চেয়ে জুতার আকৃতি ছোট হওয়ার পা চেপে রাখতে হয়। স্কুলের সারাটা সময় পায়ের আঙুল ভেঙে রাখতে হয়। অনেক কষ্টের কাজ। বাংলাদেশের অনেক ছেলেমেয়ের এই ধরণের কষ্ট সহ্য করে ক্লাস করে। অথচ পাশের জন বুঝেও না কি কষ্টটাই না হচ্ছে। এ তীব্র নীরব কষ্ট নিয়ে পড়ালেখায় কতটুকু মনযোগ দেওয়া সম্ভব তা প্রশ্নসাধ্য।
ছোট বোনের পরীক্ষা আসছে। এখন তো আর দুই জোড়া জুতা নেওয়া সম্ভব না। আর ও পরীক্ষার সময় জুতা পড়তেও চায় না। সেজন্য ও একটা দরখাস্ত লিখতে বসে।
: কিরে কিসের জন্য দরখাস্ত লিখছিস?
: জুতা না পরার জন্য।
জীবনেও এইধরণের দরখাস্তের কথা শুনি নাই। বাস্তব ক্ষেত্রে শুধু ছুটির জন্য দরখাস্ত লিখছি। তবে পরীক্ষা পাশের জন্য অনেক দরখাস্ত শিখছি। তোমার এলাকায় পানীয় জলের সংকট দূর করার জন্য একটা নলকূপের আবেদন জানিয়ে দরখাস্ত লিখ, বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রীর জন্য আবেদন, তোমার এলাকায় মোবাইল টাওয়ার বসানোর প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে একটা লেখা পত্রিকার চিঠি পত্র বিভাগে ছাপানোর জন্য লিখ। এসব আরো অনেক কিছু। কিন্তু জুতা না পড়ার আবেদন নিয়ে লেখা দরখাস্ত থাকতে পারে তা কখনো কল্পনাও করি নাই।
: দরখাস্ত কি সবার পক্ষ থেকে? মানে আর যাতে কারো জুতা পড়তে না হয় এজন্য?
: আরে না।
: তবে?
: আমার জন্য শুধু। সবার জন্য হলে রাজি হবেন না শিক্ষকরা।
: কারণ কি দিবি?
: এখন কথা বলিও না। লিখি আগে। লেখার পর তোমাকে দেখাবো।
কিছুক্ষণের মধ্যে দেখি লেখা শেষ। পড়তে দিল আমায়। এ ফোর সাইজের অফসেট পেপারে লিখা। আমি কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট বের করার জন্য কিনছিলাম এক বান্ডিল। সেখান থেকে নিয়েছে।
কারণ হিসাবে বেশ কিছু লিখল। তবে উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে লিখল, আমার এলার্জিজনিত কারণে জুতা পড়তে সমস্যা হয়।
পড়া শেষে দরখাস্তটা ওর হাতে দিলাম। জিজ্ঞেস করল- কেমন হয়েছে?
বললাম, খারাপ না। ভালোই।
: এলার্জির কথা কেন লিখলাম জানো? রোগের উপর তো কারো হাত নেই, এজন্যই। দেখছো আমি বুদ্ধিমান না? স্যাররা অনুমতি দিতে বাধ্য হবেন।
: তোর সত্যি সত্যি এলার্জি আছে নাকি?
: নাহ।
: দেখতে চাইলে কি করবি?
ও বিশ্বজয়ের হাসি হেসে বলল, সে পরিকল্পনাও নেওয়া হয়ে গেছে।
: মানে?
: পায়ের এক জায়গায় চুলকাতে চুলকাতে ক্ষত করে ফেলব। এলার্জির মত দেখাবে।
আমি আঁতকে উঠি। কি ভয়ানক পরিকল্পনা!
: ক্ষত করলে ব্যাথা পাবি না?
: পাবো। তারপরও জুতার চেয়ে ভালো আছে।
দরখাস্তে আম্মুর কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয় ও।
ওর পরীক্ষা চলছে। দরখাস্তটা পরীক্ষার প্রবেশ পত্রের মত যত্ন করে নিয়ে যায়। কোন স্যার যদি জুতা না পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করে তাহলে দরখাস্তটা দেখিয়ে দেবে।

আমি প্রশ্নের উত্তর দিতে পছন্দ করি। বলি, জুতা স্যান্ডেলের চেয়ে বেশি নিরাপদ।
: কেমন?
আমি বলি, ধর স্যান্ডেল পড়ে হাটছিস। মাটিতে পিপঁড়া, জোক থাকলে সহজে কামড়াতে পারবে। জুতা পড়া থাকলে পিপড়া, জোক সহজে আক্রমণ করতে পারে না।
ও আমার কথায় মাথা নাড়ে। অথ্যাৎ আমার কথা মেনে নিয়েছে।
শুধু মাথা নেড়ে ক্ষান্ত হয় না। মুখ খোলে কিছু বলার জন্য।
: বনজঙ্গলে যারা থাকে ওদের জন্য জুতা অবশ্যই পরা দরকার। ঐখানে সাপ জোঁকের ভয়। কিন্তু আমি তো কোন বনজঙ্গলে পড়ি না। স্কুলে পড়ি। আর আমাদের স্কুল জোঁকের ঘাঁটিও না। তাহলে আমাদের জুতা পড়তে হবে কেন?
সুন্দর প্রশ্ন।
: তোদের স্কুলে সাদা জুতা নির্ধারণ করে দিয়েছে যাতে সবাই যেন একই রকম জুতা পড়ে। এক এক জন বৈচিত্র পূর্ণ জুতা পড়লে বিশ্রী দেখাতো। অথ্যাৎ শৃঙ্খলা বজার রাখার জন্য জুতা পড়তে হয়। দেখছ না আর্মিরা কি সুন্দর জুতা পড়ে লেফট রাইট করে?
: আর্মিরা পড়ে, কেননা ওদের তা দরকার আছে। বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে ওদের অংশগ্রহণ করতে হয়। যুদ্ধে যেতে হয়। জুতা না পড়লে ওদের চলে না। কিন্তু আমরাতো আর ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণ করি না। আমাদের জুতা পড়ার কোন কারণ দেখি না। জুতা পড়লে পা গরমে ঘেমে যায়। কি বিরক্তিকর। অনেক কষ্টের। আর ঐইযে সবার একই রকমের কথা বললা। সেটা টো জুতা না পড়েও হওয়া যায়। সবাইকে একই রকম স্যান্ডেল পড়ে আসতে বললেই হলো। সবাই একই রকম পড়বে।
এক নাগাড়ে বিজ্ঞের মত কথা গুলো বলে ফেলে ও।
স্কুলে যাওয়ার সময় ও জুতা পড়ে যায়। ব্যাগের ভিতর নিয়ে যায় এক জোড়া স্যান্ডেল। ক্লাসে ঢুকার সাথে সাথে জুতা খুলে ব্যাগে রেখে দেয়। স্যান্ডেল পড়ে। আবার ছুটির সময় জুতা পড়ে বের হয়।
আসলে গরম কালে জুতা পড়া অনেক বেশি কষ্টের। আর যেসব স্কুলে দরিদ্র ঘরের ছেলে মেয়েরা পড়ে তাদের জন্য জুতা নেওয়া বেশ কষ্ট সাধ্য। কেননা এক জুতা দিয়ে শিক্ষা জীবন শেষ হয় না। সময়ের সাথে পায়ের আকৃতি বাড়ে। জুতাতো আর বাড়ে না। জুতার দামও বেশি। নতুন জুতা নিতে না পেরে ছোট জুতা গুলো পড়েই স্কুলে থাকতে হয়। পায়ের চেয়ে জুতার আকৃতি ছোট হওয়ার পা চেপে রাখতে হয়। স্কুলের সারাটা সময় পায়ের আঙুল ভেঙে রাখতে হয়। অনেক কষ্টের কাজ। বাংলাদেশের অনেক ছেলেমেয়ের এই ধরণের কষ্ট সহ্য করে ক্লাস করে। অথচ পাশের জন বুঝেও না কি কষ্টটাই না হচ্ছে। এ তীব্র নীরব কষ্ট নিয়ে পড়ালেখায় কতটুকু মনযোগ দেওয়া সম্ভব তা প্রশ্নসাধ্য।
ছোট বোনের পরীক্ষা আসছে। এখন তো আর দুই জোড়া জুতা নেওয়া সম্ভব না। আর ও পরীক্ষার সময় জুতা পড়তেও চায় না। সেজন্য ও একটা দরখাস্ত লিখতে বসে।
: কিরে কিসের জন্য দরখাস্ত লিখছিস?
: জুতা না পরার জন্য।
জীবনেও এইধরণের দরখাস্তের কথা শুনি নাই। বাস্তব ক্ষেত্রে শুধু ছুটির জন্য দরখাস্ত লিখছি। তবে পরীক্ষা পাশের জন্য অনেক দরখাস্ত শিখছি। তোমার এলাকায় পানীয় জলের সংকট দূর করার জন্য একটা নলকূপের আবেদন জানিয়ে দরখাস্ত লিখ, বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রীর জন্য আবেদন, তোমার এলাকায় মোবাইল টাওয়ার বসানোর প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে একটা লেখা পত্রিকার চিঠি পত্র বিভাগে ছাপানোর জন্য লিখ। এসব আরো অনেক কিছু। কিন্তু জুতা না পড়ার আবেদন নিয়ে লেখা দরখাস্ত থাকতে পারে তা কখনো কল্পনাও করি নাই।
: দরখাস্ত কি সবার পক্ষ থেকে? মানে আর যাতে কারো জুতা পড়তে না হয় এজন্য?
: আরে না।
: তবে?
: আমার জন্য শুধু। সবার জন্য হলে রাজি হবেন না শিক্ষকরা।
: কারণ কি দিবি?
: এখন কথা বলিও না। লিখি আগে। লেখার পর তোমাকে দেখাবো।
কিছুক্ষণের মধ্যে দেখি লেখা শেষ। পড়তে দিল আমায়। এ ফোর সাইজের অফসেট পেপারে লিখা। আমি কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট বের করার জন্য কিনছিলাম এক বান্ডিল। সেখান থেকে নিয়েছে।
কারণ হিসাবে বেশ কিছু লিখল। তবে উল্লেখযোগ্য কারণ হিসাবে লিখল, আমার এলার্জিজনিত কারণে জুতা পড়তে সমস্যা হয়।
পড়া শেষে দরখাস্তটা ওর হাতে দিলাম। জিজ্ঞেস করল- কেমন হয়েছে?
বললাম, খারাপ না। ভালোই।
: এলার্জির কথা কেন লিখলাম জানো? রোগের উপর তো কারো হাত নেই, এজন্যই। দেখছো আমি বুদ্ধিমান না? স্যাররা অনুমতি দিতে বাধ্য হবেন।
: তোর সত্যি সত্যি এলার্জি আছে নাকি?
: নাহ।
: দেখতে চাইলে কি করবি?
ও বিশ্বজয়ের হাসি হেসে বলল, সে পরিকল্পনাও নেওয়া হয়ে গেছে।
: মানে?
: পায়ের এক জায়গায় চুলকাতে চুলকাতে ক্ষত করে ফেলব। এলার্জির মত দেখাবে।
আমি আঁতকে উঠি। কি ভয়ানক পরিকল্পনা!
: ক্ষত করলে ব্যাথা পাবি না?
: পাবো। তারপরও জুতার চেয়ে ভালো আছে।
দরখাস্তে আম্মুর কাছ থেকে স্বাক্ষর নেয় ও।
ওর পরীক্ষা চলছে। দরখাস্তটা পরীক্ষার প্রবেশ পত্রের মত যত্ন করে নিয়ে যায়। কোন স্যার যদি জুতা না পড়ার কারণ জিজ্ঞেস করে তাহলে দরখাস্তটা দেখিয়ে দেবে।