রাত সাড়ে তিনটা বাজছে। কিছুক্ষণ পরই পাখি ডাকা শুরু হবে। মসজিদ গুলো থেকে
ভেসে আসবে ফজরের আযান। আস্তে আস্তে পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠবে। রিমন পিসির
সামনে বসে আছে। ফেসবুক খোলা। মেসেজের ট্যাবের দিকে মনযোগ ওর।
নাজিয়ার সাথে কথাগুলো পড়ছে। একটা সময় এ নাজিয়ার সাথে কত কথা হতো। কথা বলতে বলতে রাত পার হয়ে যেতো। আজও পার হচ্ছে। তবে পার্থক্য হচ্ছে আগে কথা বলতে বলতে পার হতো আর এখন পার হচ্ছে আগের কথাগুলো পড়ে। খুব যে গুরুত্বপূর্ণ কথা হতো তাও না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুচ্ছ কথাবার্তা। প্রথম দিকে নাজিয়াই নক করতো বেশি। এক সময় রিমনেরও ভাল লাগে ওর সাথে কথা বলতে। নিজ থেকে নক করে। প্রথম যেবার নক করেছিল সেদিন নাজিয়া খুব অবাক হয়েছিল।
কেমন আছে তা জানতে চেয়েছিল, তার উত্তরে বারটা মাথা ঘুরানোর ইমো পাঠায় নাজিয়া।
: কেমন আছোর উত্তরে এত্তগুলো মাথা ঘুরানোর ইমো, বুঝলাম না।
: ইমো গুলো তো অন্য কারণে। সত্যিই আমি অবাক!
: কেন কেন?
: আপনি আমাকে নক করেছেন দেখে।
: নক করা মানে নাকি?
: আরে তা হবে কেন। কিন্তু সব সময় তো আমিই নক করি। আপনি এর আগে কখনো করেননি। আজ সূর্য তার দিক পরিবর্তন করে নি তো?
: সূর্যের দিকের সাথে মানুষের মনের প্রভাব জানি না। তবে আজ আমার মন বেশ ভাল।
: তাই? তাড়াতাড়ি বলে ফেলুনতো মন ভাল লাগার কারণ, আমার মনটাও ভাল হয়ে যাক।
: তোমার কি মন খারাপ?
: হুম, এই আর নতুন কি! আমার মন প্রায় সময়ই খারাপ থাকে। এজন্য আমার কাছে মন ভাল করার খবর অনেক বেশি ভাল লাগে। আপনাকে বলেছিই, যে মেয়ের মা পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না তারচেয়ে আর হতভাগা কে আছে। মন খারাপ হলে আম্মুর সাথে কল্পনায় কথা বলি। আমার খুব ইচ্ছা আম্মুর কাছে চলে যাওয়ার। বড় কোন অসুখও হচ্ছে না। ইশ আমার যদি বড় কোন অসুখ হতো। আম্মুর মত কোন অসুখ যে অসুখে চিকিৎসা তেমন কোন কাজ করতে পারে না। আত্মহত্যা করা ধর্মে নিষেধ আছে। নাহলে কবে নিজে নিজেই চলে যেতাম। আমি যে এ পৃথিবী ছাড়ার ছাড়পত্র কবে পাবো। অপেক্ষায় আছি।
: এসব অলুক্ষণে কথা রাখো তো। আমারও মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
: ওহ! সরি। আচ্ছা আপনার ভাল খবরটা দিচ্ছেন না কেন। তাড়াতাড়ি বলুন। ফ্রিজে কয়েকটা সন্দেশ আছে। তার মধ্যে থেকে একটা খেয়ে ভাল খবরটা উদযাপন করবো।
: একা খেয়ে উদযাপন?
: দোকা পাবো কোথায়! আপনি তো আর আসবেন না। নাকি আসবেন? তবে এসেও লাভ নেই। আমার সৎ মা যে ভয়ংকর। ওনার ব্যবহার দেখেই আপনি বিদায় নেবেন। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জানেন?
: কি সিদ্ধান্ত?
: আমি কখনো বিয়ে করবো না। বিয়ের পর তো জামাইরা শ্বাশুড়ির কাছ থেকে ভাল আদর সমাদর পায়। কিন্তু আমাকে যে বিয়ে করবে সে তো পাবে শুধু টিটকারী, আদর সমাদর তো অনেক পরের কথা। কি দরকার একটা মানুষকে এভাবে টিটকারী শুনানোর। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি বিয়ে করবো না। আচ্ছা অনেক কথা বলে ফেললাম, আপনার আনন্দের খবরটা বলেন।
: মামা বিদেশ থেকে ল্যাপটপ পাঠিয়েছেন। আজ সেটা হাতে পেলাম। যে হারে লোডশেডিং হচ্ছে ডেস্কটপে বসলেই কিছুক্ষণ পর পর উঠে যেতে হয়। এখন ল্যাপটপ থাকায় আর সমস্যা হবে না। এখন ল্যাপটপ দিয়েই তোমার সাথে চ্যাট করছি।
: ওয়াও বেশ ভাল তো। আচ্ছা একটু দাঁড়ান, আপনার ল্যাপটপ পাওয়ার খুশীতে আমি সন্দেশ এনে খেয়ে নিই। আর আমিও আজ দারুণ খুশী আপনি নক করেছেন দেখে। নিজে নক করে আপনাকে এত বিরক্ত করি ভাবে অপরাধবোধ হতো। কতবার নক করতে গিয়েও যে থেমে গিয়েছি আপনি আবার কি ভাবেন তা ভেবে। এরপরও কিন্তু আপনাকে অনেক নক করেছি। আসলে আমার অসুন্দর বাস্তবতার মাঝে এ ভার্চুয়াল জগতটা যা একটু সুন্দর। কেন সুন্দর এটা এখন বলবো না।
সেদিন আর কথা হয়নি। এরপর কোন দিন রিমন আবার কোন দিন নাজিয়া নক করতো।
দুইজনের মধ্যে কত কথা হয়ে গেছে। নিজের দু:খগুলো শেয়ার করতো নাজিয়া।
: আচ্ছা আমি যে আমার এত দু:খের কথা আপনাকে বলে বেড়াই, আপনি বিরক্ত হন না?
: নাহতো। বিরক্ত হবো কেন?
: হন না কেন। হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।
: নিজের কষ্টগুলো নিজের মধ্যে চেপে থাকলে তা চেপেই থাকে, চক্রবৃদ্ধি হাতে তা বাড়তে থাকে। একটা সময় সব কিছুর জন্য নিজেকেই দায়ী মনে হতে থাকে। কিন্তু যখন তা অন্যের সাথে শেয়ার করা হয় তখন চাপ কিছুটা কমে। কেউ তো জানলো আমার কষ্টগুলো এ অনুভূতিটা কষ্টের জন্য একটা বিষফোড়া। কষ্টকে কষ্ট দিতে না পারাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কষ্ট।বাস্তবতায় আমরা তো অসহায়। চাইলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। আমার সাথে শেয়ার করার কারণে তোমার কষ্টগুলো যদি কিছু কষ্ট পায় তা আমার জন্যও কিছুটা হলেও স্বস্তির।
: আপনি এত সুন্দর করে কথা বলেন কেন!
: সুন্দর হয়েছে? ঠিক আছে সামনে থেকে সুন্দর করে কথা বলবো না। অসুন্দর করে বলবো।
: বলেন তো দেখি। আপনি অসুন্দর কি কথা বলতে পারেন দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
: সত্যি সত্যি বলবো?
: হা বলুন।
: অসুন্দর, অসুন্দর, অসুন্দর, অসুন্দর।
: কি অসুন্দর?
: আমার কথা! এইতো বললাম।
: ধ্যাৎ আপনি আসলে অনেক চালাক।
: তাই?
: হুম।
: আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?
: বলো।
: আমার মা যদি বেঁচে থাকতো পৃথিবীর কি এমন ক্ষতি হতো? কি ক্ষতি হতো? এখন আবার সান্ত্বনা দিয়ে বলবেন না সবার মা-বাবা চিরকাল বেঁচে থাকে না। যার যায় সেই বুঝে।
: আমি সান্ত্বনা দিতে পারি না। আর এসব ব্যাপার গুলোর কোন উত্তর নেই। কোন উত্তর নেই।
রিমন আগের চ্যাট গুলো পড়ে যাই। খারাপ লাগে নাজিয়ার জন্য। একটা সময় কত কথা হতো। কত গল্প। ল্যাপটপ কেনার পর বিভিন্ন ঘটনা শেয়ার করা শুরু করে একটু রসকস দিয়ে। স্ট্যাটাসগুলোতে লাইকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতিদিন অনেকে রিকোয়েস্ট পাঠায়। তার চেয়ে বেশি যোগ হয় ফলোয়ার লিস্টে। ইনবক্সে মেসেজের পাহাড়। রিমনের ইনবক্সে ঢুকতেই ভয় লাগে। নানা জনের নানা মেসেজ, কেউ এ বিষয়টা জানতে চায়, কেউ বা অন্য বিষয় জানাতে চায়, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার মেসেজই বেশি আসে। কেউবা লিংক দিয়ে অনুরোধ করে তা শেয়ার করার।
তখনও নাজিয়া নক করতো। কিন্তু ফ্রেন্ড সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আর স্ট্যাটাস লেখায় বেশি মনযোগ দেয়ার আগের মত সাথে সাথে রিপ্লাই দেয়া হতো না। অভিমানী মেয়েটা অপেক্ষায় থাকতো। উত্তর দিতো, তবে দেরি হয়ে যেতো।
প্রায় সময় একই ঘটনা ঘটতে লাগতো। অভিমানী মেয়েটা একদিন বিশাল একটা লেখা পাঠায়,
“মনে আছে, আমাদের পরিচয়ের প্রথম দিকের কথা? নক করে করে আপনাকে বিরক্ত করতাম। আপনি বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করতেন না। ভদ্রতার কারণেই হোক কিংবা অন্য কোন কারণেই হোক ফেসবুকে থাকলে সাথে সাথে উত্তর দিতেন।
আমার লেখাটা যিনি পড়ছেন তিনি আমি যে রিমনকে চিনতাম সে রিমন না, এটা সেলিব্রেটি রিমন। এখন তার অনেক ফ্রেন্ড। অনেক ব্যস্ততা। তবে আমি যাকে আগে চিনতাম সে রিমনকেই এ লেখাটা লিখছি।
আচ্ছা কেমন লাগে যখন অনেক ফ্রেন্ড লাইক দিয়ে যায়, অনেক ভাল তাই না? আমি তো কখনো সেলিব্রেটি হতে পারবো না তাই জানা হবে না এ অনুভূতি। তবে আমার জন্য এরচেয়ে বড় অনুভূতির ব্যাপার আছে। যখন আপনার সাথে অনেক অনেক কথা হতো। অনেক কথা হতো।
আমি বাস্তবতা বুঝি। জানি এখন অনেকজনের মেসেজের উত্তর দিতে হয়। সেজন্য দেরি হয়। একসময় তো এত মেসেজের উত্তর দিতে হতো না। তাই আমার মেসেজের সাথে সাথে উত্তর দিতে পারতেন।
আপনাকে একদিন বলেছিলাম, “আমার অসুন্দর বাস্তবতার মাঝে এ ভার্চুয়াল জগতটা যা একটু সুন্দর। কেন সুন্দর এটা এখন বলবো না।”
হয়ত ভুলে গেছেন। কেন সুন্দর বলেছিলাম আজ বলছি। আপনি আমার সাথে কথা বলতেন এ কারণে। মন খারাপ করে ফেসবুকে ঢুকে আপনার সাথে কথা বললেই মন ভাল হয়ে যেতো। মন ভাল করে দেয়ার অদ্ভূত একটা গুণ আছে আপনার। এখন অনেকের মন নিশ্চয় ভাল হয় আপনার সাথে কথা বলে।
আপনাকে মেসেজ দিয়ে অপেক্ষায় থাকতাম। মোবাইল দিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করি বেশি। কতবার যে রিলোড নিতাম । তবে হতাশ হতে হতো। ব্যস্ততার কারণে রিপ্লাই আসতে দেরি হতো।
আমি আসলে কেমন যেন। একটা সময় চিন্তা করলাম এত অপেক্ষা করার দরকার কি। তার চেয়ে অপেক্ষা না করার ব্যবস্থা করে নিলেইতো হয়। জানি অনেক মন খারাপ থাকবে। আগে যেমন মন খারাপ হলে ফেসবুকে ঢুকে মন ভাল করার সুযোগ ছিল সেটা আর হবে না। তারপরও।
আপনাকে বিরক্ত করার একজনতো কমবে। আমার এ মেসেজের উত্তর দিতে হবে না। শুধু এটারই না। আর কখনো মেসেজের উত্তর দিতে হবে না। সত্যি বলছি আর কখনো আপনাকে উত্তর দিতে হবে না।
আইডিটা থাকবে। কিন্তু হয়ত ঘুরতে আসা হবে না। আমাকে অনেক সুন্দর উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। অনেক বেশি ভাল থাকবেন।”
ওই মেসেজ দেখে সাথে সাথে উত্তর দিতে যাবে রিমন। কিন্তু দেখে নাহ, সম্ভব না। ব্লক করে দিয়েছে।
রিমনের কাছে সেলফোন নাম্বারও নাই যে ব্যাপারটা ওকে বুঝিয়ে বলবে। অভিমানী মেয়েটার সাথে আর কখনো কথা বলতে পারে নি।
মাঝে মাঝেই ওর সাথের কথাগুলো পড়ে। মাঝরাতে যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায় পৃথিবী তখন ইনবক্সে ঢুকে নাজিয়ার সাথে কথাগুলো পড়ে যায় রিমন। বুকের ভেতর একটা ব্যাথা অনুভব করে। নিজেকে অপরাধী মনে হয়।
নাজিয়ার সাথে কথাগুলো পড়ছে। একটা সময় এ নাজিয়ার সাথে কত কথা হতো। কথা বলতে বলতে রাত পার হয়ে যেতো। আজও পার হচ্ছে। তবে পার্থক্য হচ্ছে আগে কথা বলতে বলতে পার হতো আর এখন পার হচ্ছে আগের কথাগুলো পড়ে। খুব যে গুরুত্বপূর্ণ কথা হতো তাও না। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তুচ্ছ কথাবার্তা। প্রথম দিকে নাজিয়াই নক করতো বেশি। এক সময় রিমনেরও ভাল লাগে ওর সাথে কথা বলতে। নিজ থেকে নক করে। প্রথম যেবার নক করেছিল সেদিন নাজিয়া খুব অবাক হয়েছিল।
কেমন আছে তা জানতে চেয়েছিল, তার উত্তরে বারটা মাথা ঘুরানোর ইমো পাঠায় নাজিয়া।
: কেমন আছোর উত্তরে এত্তগুলো মাথা ঘুরানোর ইমো, বুঝলাম না।
: ইমো গুলো তো অন্য কারণে। সত্যিই আমি অবাক!
: কেন কেন?
: আপনি আমাকে নক করেছেন দেখে।
: নক করা মানে নাকি?
: আরে তা হবে কেন। কিন্তু সব সময় তো আমিই নক করি। আপনি এর আগে কখনো করেননি। আজ সূর্য তার দিক পরিবর্তন করে নি তো?
: সূর্যের দিকের সাথে মানুষের মনের প্রভাব জানি না। তবে আজ আমার মন বেশ ভাল।
: তাই? তাড়াতাড়ি বলে ফেলুনতো মন ভাল লাগার কারণ, আমার মনটাও ভাল হয়ে যাক।
: তোমার কি মন খারাপ?
: হুম, এই আর নতুন কি! আমার মন প্রায় সময়ই খারাপ থাকে। এজন্য আমার কাছে মন ভাল করার খবর অনেক বেশি ভাল লাগে। আপনাকে বলেছিই, যে মেয়ের মা পৃথিবীতে বেঁচে থাকে না তারচেয়ে আর হতভাগা কে আছে। মন খারাপ হলে আম্মুর সাথে কল্পনায় কথা বলি। আমার খুব ইচ্ছা আম্মুর কাছে চলে যাওয়ার। বড় কোন অসুখও হচ্ছে না। ইশ আমার যদি বড় কোন অসুখ হতো। আম্মুর মত কোন অসুখ যে অসুখে চিকিৎসা তেমন কোন কাজ করতে পারে না। আত্মহত্যা করা ধর্মে নিষেধ আছে। নাহলে কবে নিজে নিজেই চলে যেতাম। আমি যে এ পৃথিবী ছাড়ার ছাড়পত্র কবে পাবো। অপেক্ষায় আছি।
: এসব অলুক্ষণে কথা রাখো তো। আমারও মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
: ওহ! সরি। আচ্ছা আপনার ভাল খবরটা দিচ্ছেন না কেন। তাড়াতাড়ি বলুন। ফ্রিজে কয়েকটা সন্দেশ আছে। তার মধ্যে থেকে একটা খেয়ে ভাল খবরটা উদযাপন করবো।
: একা খেয়ে উদযাপন?
: দোকা পাবো কোথায়! আপনি তো আর আসবেন না। নাকি আসবেন? তবে এসেও লাভ নেই। আমার সৎ মা যে ভয়ংকর। ওনার ব্যবহার দেখেই আপনি বিদায় নেবেন। আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি জানেন?
: কি সিদ্ধান্ত?
: আমি কখনো বিয়ে করবো না। বিয়ের পর তো জামাইরা শ্বাশুড়ির কাছ থেকে ভাল আদর সমাদর পায়। কিন্তু আমাকে যে বিয়ে করবে সে তো পাবে শুধু টিটকারী, আদর সমাদর তো অনেক পরের কথা। কি দরকার একটা মানুষকে এভাবে টিটকারী শুনানোর। তাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি বিয়ে করবো না। আচ্ছা অনেক কথা বলে ফেললাম, আপনার আনন্দের খবরটা বলেন।
: মামা বিদেশ থেকে ল্যাপটপ পাঠিয়েছেন। আজ সেটা হাতে পেলাম। যে হারে লোডশেডিং হচ্ছে ডেস্কটপে বসলেই কিছুক্ষণ পর পর উঠে যেতে হয়। এখন ল্যাপটপ থাকায় আর সমস্যা হবে না। এখন ল্যাপটপ দিয়েই তোমার সাথে চ্যাট করছি।
: ওয়াও বেশ ভাল তো। আচ্ছা একটু দাঁড়ান, আপনার ল্যাপটপ পাওয়ার খুশীতে আমি সন্দেশ এনে খেয়ে নিই। আর আমিও আজ দারুণ খুশী আপনি নক করেছেন দেখে। নিজে নক করে আপনাকে এত বিরক্ত করি ভাবে অপরাধবোধ হতো। কতবার নক করতে গিয়েও যে থেমে গিয়েছি আপনি আবার কি ভাবেন তা ভেবে। এরপরও কিন্তু আপনাকে অনেক নক করেছি। আসলে আমার অসুন্দর বাস্তবতার মাঝে এ ভার্চুয়াল জগতটা যা একটু সুন্দর। কেন সুন্দর এটা এখন বলবো না।
সেদিন আর কথা হয়নি। এরপর কোন দিন রিমন আবার কোন দিন নাজিয়া নক করতো।
দুইজনের মধ্যে কত কথা হয়ে গেছে। নিজের দু:খগুলো শেয়ার করতো নাজিয়া।
: আচ্ছা আমি যে আমার এত দু:খের কথা আপনাকে বলে বেড়াই, আপনি বিরক্ত হন না?
: নাহতো। বিরক্ত হবো কেন?
: হন না কেন। হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।
: নিজের কষ্টগুলো নিজের মধ্যে চেপে থাকলে তা চেপেই থাকে, চক্রবৃদ্ধি হাতে তা বাড়তে থাকে। একটা সময় সব কিছুর জন্য নিজেকেই দায়ী মনে হতে থাকে। কিন্তু যখন তা অন্যের সাথে শেয়ার করা হয় তখন চাপ কিছুটা কমে। কেউ তো জানলো আমার কষ্টগুলো এ অনুভূতিটা কষ্টের জন্য একটা বিষফোড়া। কষ্টকে কষ্ট দিতে না পারাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কষ্ট।বাস্তবতায় আমরা তো অসহায়। চাইলেও অনেক কিছু করা সম্ভব হয় না। আমার সাথে শেয়ার করার কারণে তোমার কষ্টগুলো যদি কিছু কষ্ট পায় তা আমার জন্যও কিছুটা হলেও স্বস্তির।
: আপনি এত সুন্দর করে কথা বলেন কেন!
: সুন্দর হয়েছে? ঠিক আছে সামনে থেকে সুন্দর করে কথা বলবো না। অসুন্দর করে বলবো।
: বলেন তো দেখি। আপনি অসুন্দর কি কথা বলতে পারেন দেখতে খুব ইচ্ছা করছে।
: সত্যি সত্যি বলবো?
: হা বলুন।
: অসুন্দর, অসুন্দর, অসুন্দর, অসুন্দর।
: কি অসুন্দর?
: আমার কথা! এইতো বললাম।
: ধ্যাৎ আপনি আসলে অনেক চালাক।
: তাই?
: হুম।
: আচ্ছা একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?
: বলো।
: আমার মা যদি বেঁচে থাকতো পৃথিবীর কি এমন ক্ষতি হতো? কি ক্ষতি হতো? এখন আবার সান্ত্বনা দিয়ে বলবেন না সবার মা-বাবা চিরকাল বেঁচে থাকে না। যার যায় সেই বুঝে।
: আমি সান্ত্বনা দিতে পারি না। আর এসব ব্যাপার গুলোর কোন উত্তর নেই। কোন উত্তর নেই।
রিমন আগের চ্যাট গুলো পড়ে যাই। খারাপ লাগে নাজিয়ার জন্য। একটা সময় কত কথা হতো। কত গল্প। ল্যাপটপ কেনার পর বিভিন্ন ঘটনা শেয়ার করা শুরু করে একটু রসকস দিয়ে। স্ট্যাটাসগুলোতে লাইকের সংখ্যা বাড়তে থাকে। প্রতিদিন অনেকে রিকোয়েস্ট পাঠায়। তার চেয়ে বেশি যোগ হয় ফলোয়ার লিস্টে। ইনবক্সে মেসেজের পাহাড়। রিমনের ইনবক্সে ঢুকতেই ভয় লাগে। নানা জনের নানা মেসেজ, কেউ এ বিষয়টা জানতে চায়, কেউ বা অন্য বিষয় জানাতে চায়, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার মেসেজই বেশি আসে। কেউবা লিংক দিয়ে অনুরোধ করে তা শেয়ার করার।
তখনও নাজিয়া নক করতো। কিন্তু ফ্রেন্ড সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আর স্ট্যাটাস লেখায় বেশি মনযোগ দেয়ার আগের মত সাথে সাথে রিপ্লাই দেয়া হতো না। অভিমানী মেয়েটা অপেক্ষায় থাকতো। উত্তর দিতো, তবে দেরি হয়ে যেতো।
প্রায় সময় একই ঘটনা ঘটতে লাগতো। অভিমানী মেয়েটা একদিন বিশাল একটা লেখা পাঠায়,
“মনে আছে, আমাদের পরিচয়ের প্রথম দিকের কথা? নক করে করে আপনাকে বিরক্ত করতাম। আপনি বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করতেন না। ভদ্রতার কারণেই হোক কিংবা অন্য কোন কারণেই হোক ফেসবুকে থাকলে সাথে সাথে উত্তর দিতেন।
আমার লেখাটা যিনি পড়ছেন তিনি আমি যে রিমনকে চিনতাম সে রিমন না, এটা সেলিব্রেটি রিমন। এখন তার অনেক ফ্রেন্ড। অনেক ব্যস্ততা। তবে আমি যাকে আগে চিনতাম সে রিমনকেই এ লেখাটা লিখছি।
আচ্ছা কেমন লাগে যখন অনেক ফ্রেন্ড লাইক দিয়ে যায়, অনেক ভাল তাই না? আমি তো কখনো সেলিব্রেটি হতে পারবো না তাই জানা হবে না এ অনুভূতি। তবে আমার জন্য এরচেয়ে বড় অনুভূতির ব্যাপার আছে। যখন আপনার সাথে অনেক অনেক কথা হতো। অনেক কথা হতো।
আমি বাস্তবতা বুঝি। জানি এখন অনেকজনের মেসেজের উত্তর দিতে হয়। সেজন্য দেরি হয়। একসময় তো এত মেসেজের উত্তর দিতে হতো না। তাই আমার মেসেজের সাথে সাথে উত্তর দিতে পারতেন।
আপনাকে একদিন বলেছিলাম, “আমার অসুন্দর বাস্তবতার মাঝে এ ভার্চুয়াল জগতটা যা একটু সুন্দর। কেন সুন্দর এটা এখন বলবো না।”
হয়ত ভুলে গেছেন। কেন সুন্দর বলেছিলাম আজ বলছি। আপনি আমার সাথে কথা বলতেন এ কারণে। মন খারাপ করে ফেসবুকে ঢুকে আপনার সাথে কথা বললেই মন ভাল হয়ে যেতো। মন ভাল করে দেয়ার অদ্ভূত একটা গুণ আছে আপনার। এখন অনেকের মন নিশ্চয় ভাল হয় আপনার সাথে কথা বলে।
আপনাকে মেসেজ দিয়ে অপেক্ষায় থাকতাম। মোবাইল দিয়ে ফেসবুক ব্যবহার করি বেশি। কতবার যে রিলোড নিতাম । তবে হতাশ হতে হতো। ব্যস্ততার কারণে রিপ্লাই আসতে দেরি হতো।
আমি আসলে কেমন যেন। একটা সময় চিন্তা করলাম এত অপেক্ষা করার দরকার কি। তার চেয়ে অপেক্ষা না করার ব্যবস্থা করে নিলেইতো হয়। জানি অনেক মন খারাপ থাকবে। আগে যেমন মন খারাপ হলে ফেসবুকে ঢুকে মন ভাল করার সুযোগ ছিল সেটা আর হবে না। তারপরও।
আপনাকে বিরক্ত করার একজনতো কমবে। আমার এ মেসেজের উত্তর দিতে হবে না। শুধু এটারই না। আর কখনো মেসেজের উত্তর দিতে হবে না। সত্যি বলছি আর কখনো আপনাকে উত্তর দিতে হবে না।
আইডিটা থাকবে। কিন্তু হয়ত ঘুরতে আসা হবে না। আমাকে অনেক সুন্দর উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। অনেক বেশি ভাল থাকবেন।”
ওই মেসেজ দেখে সাথে সাথে উত্তর দিতে যাবে রিমন। কিন্তু দেখে নাহ, সম্ভব না। ব্লক করে দিয়েছে।
রিমনের কাছে সেলফোন নাম্বারও নাই যে ব্যাপারটা ওকে বুঝিয়ে বলবে। অভিমানী মেয়েটার সাথে আর কখনো কথা বলতে পারে নি।
মাঝে মাঝেই ওর সাথের কথাগুলো পড়ে। মাঝরাতে যখন নিস্তব্ধ হয়ে যায় পৃথিবী তখন ইনবক্সে ঢুকে নাজিয়ার সাথে কথাগুলো পড়ে যায় রিমন। বুকের ভেতর একটা ব্যাথা অনুভব করে। নিজেকে অপরাধী মনে হয়।