বনভোজন ব্যাপারটা নভেম্বর থেকে শুরু হয়। প্রায়ই দেখা যায় প্রতিদিনই কোন না কোন স্কুল থেকে পিকনিকে যাচ্ছে। তাসনিম দের স্কুল থেকেও পিকনিকে যাওয়ার নোটিশ এসেছে। নোটিশ পড়া শেষে স্যার জিজ্ঞেস করলেন, কে কে যেতে চাও? নাম জমা দাও।
বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে নাম বলল। স্যার নাম আর রোল নম্বার লিখে নিচ্ছেন। তাসনিমের খুব ইচ্ছা করছে দাঁড়াতে। নাম দিবে। কিন্তু বাসায় মানা করতে পারে। নাম দিয়ে শেষে না গেলে বিশ্রী অবস্থা হবে। যারা নাম দিচ্ছে কি ভাগ্যবান। তাসনিমের পাশে বসা দোলন। সেও নাম দিয়েছে। তাসনিমকে বলল, আরে তুই দাড়াচ্ছিস না কেন? তাড়াতাড়ি নাম দেয়। অনেক মজা করা যাবে। কুমিল্লার ময়নামতি আগে একবার গিয়েছি। অনেক সুন্দর। যে বিশাল শাল বন আছে। ঐ বনের মধ্যে অল্প দূর গেলেই আর পথ খুঁজে পাবি না। সব দিক মনে হবে একই। এত্ত গাছ। যেদিকে দেখবি সেদিকে গাছ। নাম দিয়ে দেয়।
তাসনিম মন খারাপ করা গলায় বলল, আমারো যেতে ইচ্ছা। কিন্তু বাসা থেকে অনুমতি দিবে বলে মনে হয় না। তোদের অনেক মজা। যেখানে যেতে চাস সেখানে যেতে পারিস। আমাকে যেতে দেয় না। গত পিকনিকেও যেতে পারি নাই বাসা থেকে অনুমতি না পাওয়ায়।
দোলন বলে, গত পিকনিকে আমারো যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পাপা বললেন গ্রামের বাড়ীতে সবাই মিলে যাবেন। গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছিলাম সে সময়। সেখানেও অনেক মজা করেছি। আমি না গাছে উঠতে পারি। তবে বড় গাছ না। পেয়ারা গাছতো ছোট। তো সে পেয়ারা গাছে উঠছি। যদিও দাদা শুনে অনেক রাগ করছেন। মেয়ে মানুষ গাছে উঠছে ব্যাপারটা দাদা পছন্দ করেন না। পরে দাদু অনেক বুঝিয়ে দাদাকে শান্ত করেছেন। আচ্ছা তোকে অনুমতি দিবে না কেন? আমরা সবাই তো যাচ্ছি। সমস্যা কোথায়? আমরা বললে ঠিকই দেবে।
-গতবারও তো দেয় নাই। তাহা অনেক বুঝিয়েছে আম্মুকে। তবুও রাজি হন নাই।
-তুই গতবার এক বছর ছোট ছিলি। এখন তো আরো বড় হয়েছিস। এখন দেখিস ঠিকই যেতে দেবে।
- কি জানি? হতাশার সুরে বলে তাসনিম।
পিছের সিটে বসছে তাহা। ওদের কথা শুনে বলে, আমি এত্ত করে বুঝালাম আন্টিকে। আমার সাথে অনা ও গিয়েছিল। ও তো পারলে অনুমতি দেওয়ার জন্য কেঁদেই দেয়। তারপরও আন্টি যেতে দেন নি।
নাম লেখা যতক্ষণ চলছিল সবাই খোশ আমেজে গল্প করছিল। ক্লাসটাকে মনে হচ্ছিলো বাজার। স্যারের নাম লেখা শেষ হয়। স্যার বলেন এবার থামো সবাই। অনেক কথা বলেছো। মজার সব কথা এখানে বলে ফেললেই হবে? সব এখানে বলে ফেললে তো পিকনিকে গিয়ে কিছু বলার থাকবে না। তাই এখন একটু বিরত হও। দেখি পরের অঙ্কটা কেমন?
সবাই চুপ হয়ে যায়। গণিতের স্যার। অথচ কথা বলেন সাহিত্য স্টাইলে। স্যারের নাকি ছোট বেলায় ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে লেখক হবেন। একজন লেখকের একটা আত্মজীবনী পড়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন লেখক হতেই হবে। অনেক লিখেছেনও। কিন্তু সমস্যা হয়েছে কোথাও সেগুলো ছাপানো হয় নাই। স্যার মাঝে মাঝে আফছোস করে তার আগের জীবনের কথা বলেন। সামনে বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। স্যার সবাইকে বলেছেন দোয়া করতে।
তবে ছাত্রীরা দোয়া করবে কিনা তা বুঝা যাচ্ছে না। বিসি এসে টিকে গেলে স্যার এই স্কুলে থাকবেন না। চলে যাবেন। এরকম প্রিয় একজন স্যারকে কেইবা হারাতে চায়।
তাসনিম স্কুল ছুটির পর বান্ধবীদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। বাসায় রিকসা করে ফিরে। তবে রিকসা পেতে এক সমস্যা। ওদের এলাকায় সহজে রিকসা যেতে চায় না। অন্য এলাকা গুলোতে বলা মাত্রই চলে যায়। কিন্তু ওদের এলাকায় যেতে চায় না। “রিকসা যাবে? ” হুম যামু। কই যাইবেন?” “বনরুপা।” নাম শুনেই রিকসা অলা মুখের উপর বলে দেয়, না ঐখানে যামু না।
আসলে রিকসাঅলারও ঠিক দোষ দেওয়া যায় না। আসার সময় বেশিরভাগ সময় খালি আসতে হয়। যাত্রী পায় না। এই কারণেই যেতে চায় না। তবে আজ প্রথম রিকসাকে বলতেই রাজি হয়ে গেল। ভাল লাগে তাসনিমের।
রিকসা চলে। তাসনিম হুড নামিয়ে দেয়। রাস্তায় অনেক ছেলে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার বিশ্রী ভাবে শিষ দেয়। এগুলো খারাপ লাগে দেখতে। তাই রিকসায় চড়লে হুড নামিয়েই রাখে তাসনিম।
পিকনিকের কথা ভাবে। যারা নাম দিয়ে দিয়েছে কত ভাগ্যবান। বাসা থেকে কিছু বলবে না। আচ্ছা বাসায় মা-কে বললে মা কি রাজি হবেন। হবে বলে মনে হয় না। বুঝিয়ে সুজিয়ে বললে মা ভিতরে ভিতরে রাজি হবেন। কিন্তু উপর দিয়ে কোন মতে না। বাবা অনেক রাগী। অথচ যেতে পারলে অনেক মজা হতো।
ওরা পাঁচ বন্ধু একসাথে। অনেকে ওদের দেখলে হিংসা করে। ক্লাসে সব সময় এই পাঁচ জনকে একসাথে দেখা যায়। তাসনিম,দোলন, তাহা, অনা, আসপি। গ্রুপের একটা নামও দিয়েছে। পাঁচতারা। ওরা এই নামেই নিজেদের ডায়েরীতে নিজেদের বন্ধুত্বের কথা লিখে।
মা-কে বলতেই এককথায় না করে দেন। পত্রিকা পড়িস না? প্রতিদিনই তো পিকনিকের গাড়ি দূর্ঘটনার খবর আসছে। কতজন মরছে।
-মা, প্লিজ। একবার শুধু যাবো। আমাদের ক্লাসের অনেক মেয়েই যাচ্ছে। সামনের বছর তো মেট্রিক পরীক্ষার জন্য পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকতে হবে। তখন তো আর যেতে পারবো না। এবারই শুধু।
-না, আমি পারবো না অনুমতি দিতে। তোর বাবা কোন মতেই রাজি হবে না। সেদিন পত্রিকা পড়ে বলতেছিল, কি দরকার পিকনিকে যাওয়ার। লাশ হয়ে ফিরার জন্য।
তাসনিমের কান্না চলে আসে। বুঝা যাচ্ছে ওর যাওয়া যাবে না। অথচ অনা, আসপি, দোলন, তাহা যাবে। শুধু ও ই যাবে না।
পরের দিন ক্লাসে গেলে তাহা জিজ্ঞেস করে, বাসায় রাজি করতে পেরেছিস?
-না, যেতে দিবে না।
অনুমতি পায় নি শুনে ওদের সবার মন খারাপ হয়ে যায়। অনা বলে তুই চিন্তা করিস না, আমরা সবাই মিলে তোর বাসায় যাবো। যে করে হোক রাজি করাবো।
-বাবা রোড এক্সিডেন্টের ভয় পান।
-আরে কত হাজার হাজার পিকনিক যাচ্ছে। সব তো এক্সিডেন্ট হয় না। দুই একটা হয়।
-আমিও তো সেটা বলি, কিন্তু কোন মতেই যেতে দিবেন বলে মনে হয় না।
তুই নিশ্চিত থাক যেতে পারবি। আমরা যেভাবে হোক রাজি করাবো।
ওরা সিদ্ধান্ত নেয় সামনের বৃহস্পতিবার তাসনিমের বাসায় যাবে। বৃহস্পতিবার অর্ধেক ক্লাস হয়। ছুটির পর পরই তাসনিমের বাসায় যাবে।
আমরা পাঁচ বান্ধবী একসাথে আগে কোথাও বাহিরে ঘুরতে যাইনি। আসপি বলে।
দোলন বলে, হা এবার যাবো। বড় একটা সুযোগ। পাঁচজন মিলে অনেক মজা করবো। আমার চাচা নতুন একটা হাই মেগাপিক্সিলের ক্যামেরা পাঠিয়েছেন। সেটাতে ভাল ভিডিও হয়। অনেক মেমোরী। একসাথে ১৬ ঘন্টা ভিডিও করা যায়। সেটাই নিয়ে যাবো। প্রতিটি মুহূর্ত ভিডিও করে রাখবো।
হুম দারুণ হবে ভিডিও করে রাখলে। সময় গুলো আটকে রাখা যাবে । বলে হেসে উঠে অনা। সে একটু সাহিত্যিক টাইপের। এরি মধ্যে কিছু কবিতাও লিখে ফেলেছে।
তবে সমস্যা হচ্ছে সেগুলো ভালবাসা কেন্দ্রিক। এই বয়সেই। ও কাউকে দেখায় না কবিতা। দোলন অনেক দুষ্ট। একবার ওর বাসায় গিয়েছিল। ও না জানে এরকম করে ওর কবিতার ডায়েরীটা চুরি করে নিয়ে আসে। পরে অনা ছাড়া সবাইকে ওর বাসায় ডাকে। তারপর সে কবিতা গুলো জোরে জোরে পড়ে শুনানো হয়। দোলনের আবৃত্তির গলা এত ভাল না। কিন্তু কবিতার কথাগুলো শুনে সবাই অনেক মজা পায়।
বিশেষ করে বিরহী কবিতা গুলো অন্যরকম। এই অল্প বয়সে এত বিরহ চিনে ফেলল কিভাবে কে জানে। যারা লিখে তারা বোধ হয় আগেই বয়স্ক হয়ে যায়।
ব্যাপারটা পরের দিন অনাকে জানানো হয়। শুনে অনা অনেক লজ্জা পায়। রাগ করে দুই দিন তো দোলনের সাথে কথা বলাই বন্ধ রাখে।
এখনো হয়ত কবিতা লিখে। তবে দোলন ওর বাসায় যাবে শুনলে আগে থেকে সাবধান হয়ে যায়। সেদিন বলল, এখন নাকি অল্প অল্প বাংলা টাইপ শিখছে। কয়েকটি লেখা কম্পিউটারে সেভ করেছে।
দোলন তা শুনে বলে, আমি নিশ্চিত তুই পার্সওয়ার্ড দিয়ে রাখছিস। নিষিদ্ধ জিনিষ যেমন পার্সওয়াড দিয়ে রাখা হয়। ঠিক তেমনি তুই তোর কবিতাগুলোও পাসওয়ার্ড দিয়েছিস। নিষিদ্ধ জিনিষ না হলে দোষী, কিন্তু তোর কবিতা গুলোর কি দোষ?
শুনে সবাই হেসেছে। অনা গলা চেচিয়ে বলল, আমার জিনিষ আমি পার্সওয়ার্ড দিয়ে রাখুম তোর সমস্যা কি?
দোলন ওর চেয়ে চেঁচিয়ে বলে, সমস্যা নেই মানে? বাংলাদেশের সেরা মহিলা কবির কাব্য পড়া থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আর বলা হচ্ছে সমস্যা নাই। তুই আমাদের সমস্যা কি বুঝবি।
অনা আর কথা বাড়ায় না। দোলনের সাথে কথায় সহজে পারে যায় না। এজন্য এখানেই থেমে যায়।
বৃহস্পতিবার আসে। আগের সিদ্ধান্ত মত ওরা রওয়ানা হয় তাসনিমদের বাসায়। দোলনদের গাড়ী আছে। ঐ গাড়ীতে করেই সবাই রওয়ানা দেয়।
ওরা অনেক বুঝায়। আন্টি আমরা সবাই আছি। কোন সমস্যা হবে না।
তাসনিমের মা সাথে সাথে মানা করেন না, এত উৎসাহ নিয়ে বলছে। তাই তাদের মুখের উপর না বলে দিতে পারেন না।
আচ্ছা আমি দেখি। ওর বাবার সাথে কথা বলে।
ওরা খুশী হয়ে যায়। তাহা বলে, আন্টি অবশ্যই যেতে দিতে হবে কিন্তু।
তাসনিমের মা রান্না করেন। দুপুরে ওরা চলে যেতে চায়। কিন্তু তাসনিমের মা আপত্তি জানান। অবশ্যই খেয়ে যেতে হবে। না খেয়ে গেলে রাগ করব।
খাওয়া শেষ হয়।
সবাই ব্যস্ত আলোচনায়। সেখানে গিয়ে কি কি করবে। দোলন বলে, অনা তুই খাতা কলম নিতে ভুলিস না। সুন্দর দৃশ্য দেখে কবিতা লিখে ফেলতে পারবি।
আচ্ছা তুই সব সময় আমার পিছে লাগিস কেন? অন্যদের চোখে পড়ে না তোর। অর্পা, তাহা, তাসনিম ওদেরকে কিছু বল। শুধু আমাকে বলিস ক্যান?
অনার এই কথা শুনে দোলন বলে তোর সাথে করি কারণ আছে তো। তুই একসময় নামকরা কবি হবি। দেশের সবাই তোকে চিনবে। আত্মজীবনী বিক্রী হবে হুরুস্থুল। তোর আত্মজীবনীতে আমিও থাকবো। তখন তো ঠিকই এসব দুষ্টামির কথা রঙ চঙ মাখিয়ে লিখবি। মধ্যখানে আমার লাভ আমার নাম বেশি থাকবে। ওরা তো আর বড় হয়ে কবি হচ্ছে না। এজন্য ওদের পিছনে লাগি না।
বলে হাসা শুরু করে। অন্যরাও হাসিতে যোগ দেয়। এমন কি অনাও হাসে।
হঠাৎ হাসি থামিয়ে দোলন হঠাৎ মনে পড়েছে এই ভঙ্গিতে বলে, তোদেরকে না জানিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
তাসনিম জিজ্ঞেস করে, কি সিদ্ধান্ত? সিরিয়াস কিছু?
না। পিকনিকে আমরা সবাই একই রকম কাপড় পড়ে যাবো। আমরা পাঁচজন একই রঙের থ্রিপিস পড়বো।
তাহা বলে, হুর রে। খুব ভাল হবে। সুন্দর সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তো। অন্যরাও বলে, হুম অনেক ভাল হবে। মজা হবে।
তাহা বলে, কি রঙের কাপড় পড়া হবে? এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে তো। সামনের মাসের ১ তারিখেই তো পিকনিক।
দোলন বলে, এটা নিয়ে চিন্তা করবি না। তোদের কে বলি নাই বিধায় মাইন্ড করিস না। আমি অলরেডি বানাতে দিয়ে দিয়েছি একই রঙের একই ডিজাইনের পাঁচটি থ্রিপিস। শনিবার দিন ডেলিভারি দেবে। পিকনিক উপলক্ষে আমার পক্ষ থেকে এই সামন্য উপহার।
তাসনিম বলে, তুই যেভাবে বলছিস, যেন সামনে রাজনীতিতে দাঁড়াবি। রাজনীতিবিদদের মত কথা।
-দাঁড়াতেও পারি। বিশ্বাস নাই।
বিকালের দিকে ওরা চলে যায়।
সন্ধ্যায় সময় চা দিতে আসেন তাসনিমের মা। মায়ের হাত থেকে চা নেয়।
-মা তুই ভুল বুঝিস না।
তাসনিম বুঝতে পারে পিকনিকের কথা বলা হচ্ছে। তাই বলে, তুমি ওদের কে সরাসরি বলে দিলেই পারতে। এখন ওরা আশা করে আছে আমি যাবো। সরাসরি মানা করলে না কেন?
শুন আমি তোর মনের ব্যাপারটা বুঝি। আমিও তো তোর সমান ছিলাম।
-মা আমার মাথা ব্যথা করছে। এখন কিছু বলো না তো। ভাল লাগছে।
তোর কি করম খারাপ লাগছে আমি বুঝতেছি। তারপরও কিছু কথা শুনতে হবে তোকে।
আমার যখন বিয়ে হয়েছে তখনও আমি কলেজের ছাত্রী। কলেজ থেকে পিকনিকে যাওয়া হবে। আমার বান্ধবীরা বলল আমাকেও অবশ্যই যেতে হবে। যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে সেহেতু কোথায় না কোথায় চলে যাবো।
কিন্তু তোর বাবা রাজি হন নাই। নতুন বউয়ের আব্দার ফেলানো পুরুষের পক্ষে অনেক কষ্টের। তারপরও আমাকে যেতে দেয় নি। তোর বাবা পিকনিক অনেক ভয় করে।
মা এগুলো আমাকে কেন শুনাচ্ছো। আমি যাচ্ছি না।
আসল কথাই তোকে বলি নাই। তোর বাবার অনেক ভাল বন্ধু ছিল ফরহাদ। একই সাথে প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুলে পড়ত। লেখাপড়া দুইজনে মিলে করত। ফরহাদের বাসাতেই তোর আব্বা বেশি থাকত। অনেকে মনে করত তোর বাবা বুঝি ফরহাদের পরিবারেরই সদস্য।
তো স্কুল থেকে পিকনিক গেল। সবাই অনেক মজা করছে। হিমছড়িতে ঠান্ডা পানিতে মনের সুখে গোসল করছে। কিন্তু ফেরার পথে গাড়িটা ব্রেক হারিয়ে পাশের খাদেই পড়ে যায়। ফরহাদ আর তোর বাবা পাশাপাশি বসেছিলেন। জানালার পাশে তোর বাবা। জানালা দিয়ে ছিটকে বাহিরে পড়ে যায়। কিন্তু গাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ায় তোর বাবার বন্ধু বের হতে পারে নাই। সেখানেই মৃত্যু। এখনও মাঝে মাঝে তোর বাবা ফরহাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।
সে ঘটনার পর থেকে তোর বাবা পিকনিকের কথা শুনতেই পারেন না।
.....................
পিকনিকের নির্দিষ্ট দিনে সবাই আগে জানানো স্থানে উপস্থিত হয়েছে। পাঁচটা বড় বাস ঠিক করা হয়েছে। চারজন এখনো আসেনি। তাদের জন্য প্রতীক্ষা করছে একটা গাড়ি। এই গাড়ীর দায়িত্বে আছেন আকবর স্যার। তিনি বললেন, যারা আসে নি তাদের সাথে যোগাযোগ করো। জ্যামে পড়ছে নাকি?
ফোন দিয়ে জানা গেল, এই চারজন যাবে না। ওরা গাড়ী ছেড়ে দিতে বলল।
এক বান্ধবী যেতে পারছে না। তাই ওরাও গেল না। তাসনিম অনেক অনুরোধ করছে ওদের যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওরা রাজি হয় নাই।

বেশ কয়েকজন দাঁড়িয়ে নাম বলল। স্যার নাম আর রোল নম্বার লিখে নিচ্ছেন। তাসনিমের খুব ইচ্ছা করছে দাঁড়াতে। নাম দিবে। কিন্তু বাসায় মানা করতে পারে। নাম দিয়ে শেষে না গেলে বিশ্রী অবস্থা হবে। যারা নাম দিচ্ছে কি ভাগ্যবান। তাসনিমের পাশে বসা দোলন। সেও নাম দিয়েছে। তাসনিমকে বলল, আরে তুই দাড়াচ্ছিস না কেন? তাড়াতাড়ি নাম দেয়। অনেক মজা করা যাবে। কুমিল্লার ময়নামতি আগে একবার গিয়েছি। অনেক সুন্দর। যে বিশাল শাল বন আছে। ঐ বনের মধ্যে অল্প দূর গেলেই আর পথ খুঁজে পাবি না। সব দিক মনে হবে একই। এত্ত গাছ। যেদিকে দেখবি সেদিকে গাছ। নাম দিয়ে দেয়।
তাসনিম মন খারাপ করা গলায় বলল, আমারো যেতে ইচ্ছা। কিন্তু বাসা থেকে অনুমতি দিবে বলে মনে হয় না। তোদের অনেক মজা। যেখানে যেতে চাস সেখানে যেতে পারিস। আমাকে যেতে দেয় না। গত পিকনিকেও যেতে পারি নাই বাসা থেকে অনুমতি না পাওয়ায়।
দোলন বলে, গত পিকনিকে আমারো যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পাপা বললেন গ্রামের বাড়ীতে সবাই মিলে যাবেন। গ্রামের বাড়ীতে গিয়েছিলাম সে সময়। সেখানেও অনেক মজা করেছি। আমি না গাছে উঠতে পারি। তবে বড় গাছ না। পেয়ারা গাছতো ছোট। তো সে পেয়ারা গাছে উঠছি। যদিও দাদা শুনে অনেক রাগ করছেন। মেয়ে মানুষ গাছে উঠছে ব্যাপারটা দাদা পছন্দ করেন না। পরে দাদু অনেক বুঝিয়ে দাদাকে শান্ত করেছেন। আচ্ছা তোকে অনুমতি দিবে না কেন? আমরা সবাই তো যাচ্ছি। সমস্যা কোথায়? আমরা বললে ঠিকই দেবে।
-গতবারও তো দেয় নাই। তাহা অনেক বুঝিয়েছে আম্মুকে। তবুও রাজি হন নাই।
-তুই গতবার এক বছর ছোট ছিলি। এখন তো আরো বড় হয়েছিস। এখন দেখিস ঠিকই যেতে দেবে।
- কি জানি? হতাশার সুরে বলে তাসনিম।
পিছের সিটে বসছে তাহা। ওদের কথা শুনে বলে, আমি এত্ত করে বুঝালাম আন্টিকে। আমার সাথে অনা ও গিয়েছিল। ও তো পারলে অনুমতি দেওয়ার জন্য কেঁদেই দেয়। তারপরও আন্টি যেতে দেন নি।
নাম লেখা যতক্ষণ চলছিল সবাই খোশ আমেজে গল্প করছিল। ক্লাসটাকে মনে হচ্ছিলো বাজার। স্যারের নাম লেখা শেষ হয়। স্যার বলেন এবার থামো সবাই। অনেক কথা বলেছো। মজার সব কথা এখানে বলে ফেললেই হবে? সব এখানে বলে ফেললে তো পিকনিকে গিয়ে কিছু বলার থাকবে না। তাই এখন একটু বিরত হও। দেখি পরের অঙ্কটা কেমন?
সবাই চুপ হয়ে যায়। গণিতের স্যার। অথচ কথা বলেন সাহিত্য স্টাইলে। স্যারের নাকি ছোট বেলায় ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে লেখক হবেন। একজন লেখকের একটা আত্মজীবনী পড়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন লেখক হতেই হবে। অনেক লিখেছেনও। কিন্তু সমস্যা হয়েছে কোথাও সেগুলো ছাপানো হয় নাই। স্যার মাঝে মাঝে আফছোস করে তার আগের জীবনের কথা বলেন। সামনে বিসিএস পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে। স্যার সবাইকে বলেছেন দোয়া করতে।
তবে ছাত্রীরা দোয়া করবে কিনা তা বুঝা যাচ্ছে না। বিসি এসে টিকে গেলে স্যার এই স্কুলে থাকবেন না। চলে যাবেন। এরকম প্রিয় একজন স্যারকে কেইবা হারাতে চায়।
তাসনিম স্কুল ছুটির পর বান্ধবীদের কাছ থেকে বিদায় নেয়। বাসায় রিকসা করে ফিরে। তবে রিকসা পেতে এক সমস্যা। ওদের এলাকায় সহজে রিকসা যেতে চায় না। অন্য এলাকা গুলোতে বলা মাত্রই চলে যায়। কিন্তু ওদের এলাকায় যেতে চায় না। “রিকসা যাবে? ” হুম যামু। কই যাইবেন?” “বনরুপা।” নাম শুনেই রিকসা অলা মুখের উপর বলে দেয়, না ঐখানে যামু না।
আসলে রিকসাঅলারও ঠিক দোষ দেওয়া যায় না। আসার সময় বেশিরভাগ সময় খালি আসতে হয়। যাত্রী পায় না। এই কারণেই যেতে চায় না। তবে আজ প্রথম রিকসাকে বলতেই রাজি হয়ে গেল। ভাল লাগে তাসনিমের।
রিকসা চলে। তাসনিম হুড নামিয়ে দেয়। রাস্তায় অনেক ছেলে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। কেউ কেউ আবার বিশ্রী ভাবে শিষ দেয়। এগুলো খারাপ লাগে দেখতে। তাই রিকসায় চড়লে হুড নামিয়েই রাখে তাসনিম।
পিকনিকের কথা ভাবে। যারা নাম দিয়ে দিয়েছে কত ভাগ্যবান। বাসা থেকে কিছু বলবে না। আচ্ছা বাসায় মা-কে বললে মা কি রাজি হবেন। হবে বলে মনে হয় না। বুঝিয়ে সুজিয়ে বললে মা ভিতরে ভিতরে রাজি হবেন। কিন্তু উপর দিয়ে কোন মতে না। বাবা অনেক রাগী। অথচ যেতে পারলে অনেক মজা হতো।
ওরা পাঁচ বন্ধু একসাথে। অনেকে ওদের দেখলে হিংসা করে। ক্লাসে সব সময় এই পাঁচ জনকে একসাথে দেখা যায়। তাসনিম,দোলন, তাহা, অনা, আসপি। গ্রুপের একটা নামও দিয়েছে। পাঁচতারা। ওরা এই নামেই নিজেদের ডায়েরীতে নিজেদের বন্ধুত্বের কথা লিখে।
মা-কে বলতেই এককথায় না করে দেন। পত্রিকা পড়িস না? প্রতিদিনই তো পিকনিকের গাড়ি দূর্ঘটনার খবর আসছে। কতজন মরছে।
-মা, প্লিজ। একবার শুধু যাবো। আমাদের ক্লাসের অনেক মেয়েই যাচ্ছে। সামনের বছর তো মেট্রিক পরীক্ষার জন্য পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকতে হবে। তখন তো আর যেতে পারবো না। এবারই শুধু।
-না, আমি পারবো না অনুমতি দিতে। তোর বাবা কোন মতেই রাজি হবে না। সেদিন পত্রিকা পড়ে বলতেছিল, কি দরকার পিকনিকে যাওয়ার। লাশ হয়ে ফিরার জন্য।
তাসনিমের কান্না চলে আসে। বুঝা যাচ্ছে ওর যাওয়া যাবে না। অথচ অনা, আসপি, দোলন, তাহা যাবে। শুধু ও ই যাবে না।
পরের দিন ক্লাসে গেলে তাহা জিজ্ঞেস করে, বাসায় রাজি করতে পেরেছিস?
-না, যেতে দিবে না।
অনুমতি পায় নি শুনে ওদের সবার মন খারাপ হয়ে যায়। অনা বলে তুই চিন্তা করিস না, আমরা সবাই মিলে তোর বাসায় যাবো। যে করে হোক রাজি করাবো।
-বাবা রোড এক্সিডেন্টের ভয় পান।
-আরে কত হাজার হাজার পিকনিক যাচ্ছে। সব তো এক্সিডেন্ট হয় না। দুই একটা হয়।
-আমিও তো সেটা বলি, কিন্তু কোন মতেই যেতে দিবেন বলে মনে হয় না।
তুই নিশ্চিত থাক যেতে পারবি। আমরা যেভাবে হোক রাজি করাবো।
ওরা সিদ্ধান্ত নেয় সামনের বৃহস্পতিবার তাসনিমের বাসায় যাবে। বৃহস্পতিবার অর্ধেক ক্লাস হয়। ছুটির পর পরই তাসনিমের বাসায় যাবে।
আমরা পাঁচ বান্ধবী একসাথে আগে কোথাও বাহিরে ঘুরতে যাইনি। আসপি বলে।
দোলন বলে, হা এবার যাবো। বড় একটা সুযোগ। পাঁচজন মিলে অনেক মজা করবো। আমার চাচা নতুন একটা হাই মেগাপিক্সিলের ক্যামেরা পাঠিয়েছেন। সেটাতে ভাল ভিডিও হয়। অনেক মেমোরী। একসাথে ১৬ ঘন্টা ভিডিও করা যায়। সেটাই নিয়ে যাবো। প্রতিটি মুহূর্ত ভিডিও করে রাখবো।
হুম দারুণ হবে ভিডিও করে রাখলে। সময় গুলো আটকে রাখা যাবে । বলে হেসে উঠে অনা। সে একটু সাহিত্যিক টাইপের। এরি মধ্যে কিছু কবিতাও লিখে ফেলেছে।
তবে সমস্যা হচ্ছে সেগুলো ভালবাসা কেন্দ্রিক। এই বয়সেই। ও কাউকে দেখায় না কবিতা। দোলন অনেক দুষ্ট। একবার ওর বাসায় গিয়েছিল। ও না জানে এরকম করে ওর কবিতার ডায়েরীটা চুরি করে নিয়ে আসে। পরে অনা ছাড়া সবাইকে ওর বাসায় ডাকে। তারপর সে কবিতা গুলো জোরে জোরে পড়ে শুনানো হয়। দোলনের আবৃত্তির গলা এত ভাল না। কিন্তু কবিতার কথাগুলো শুনে সবাই অনেক মজা পায়।
বিশেষ করে বিরহী কবিতা গুলো অন্যরকম। এই অল্প বয়সে এত বিরহ চিনে ফেলল কিভাবে কে জানে। যারা লিখে তারা বোধ হয় আগেই বয়স্ক হয়ে যায়।
ব্যাপারটা পরের দিন অনাকে জানানো হয়। শুনে অনা অনেক লজ্জা পায়। রাগ করে দুই দিন তো দোলনের সাথে কথা বলাই বন্ধ রাখে।
এখনো হয়ত কবিতা লিখে। তবে দোলন ওর বাসায় যাবে শুনলে আগে থেকে সাবধান হয়ে যায়। সেদিন বলল, এখন নাকি অল্প অল্প বাংলা টাইপ শিখছে। কয়েকটি লেখা কম্পিউটারে সেভ করেছে।
দোলন তা শুনে বলে, আমি নিশ্চিত তুই পার্সওয়ার্ড দিয়ে রাখছিস। নিষিদ্ধ জিনিষ যেমন পার্সওয়াড দিয়ে রাখা হয়। ঠিক তেমনি তুই তোর কবিতাগুলোও পাসওয়ার্ড দিয়েছিস। নিষিদ্ধ জিনিষ না হলে দোষী, কিন্তু তোর কবিতা গুলোর কি দোষ?
শুনে সবাই হেসেছে। অনা গলা চেচিয়ে বলল, আমার জিনিষ আমি পার্সওয়ার্ড দিয়ে রাখুম তোর সমস্যা কি?
দোলন ওর চেয়ে চেঁচিয়ে বলে, সমস্যা নেই মানে? বাংলাদেশের সেরা মহিলা কবির কাব্য পড়া থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আর বলা হচ্ছে সমস্যা নাই। তুই আমাদের সমস্যা কি বুঝবি।
অনা আর কথা বাড়ায় না। দোলনের সাথে কথায় সহজে পারে যায় না। এজন্য এখানেই থেমে যায়।
বৃহস্পতিবার আসে। আগের সিদ্ধান্ত মত ওরা রওয়ানা হয় তাসনিমদের বাসায়। দোলনদের গাড়ী আছে। ঐ গাড়ীতে করেই সবাই রওয়ানা দেয়।
ওরা অনেক বুঝায়। আন্টি আমরা সবাই আছি। কোন সমস্যা হবে না।
তাসনিমের মা সাথে সাথে মানা করেন না, এত উৎসাহ নিয়ে বলছে। তাই তাদের মুখের উপর না বলে দিতে পারেন না।
আচ্ছা আমি দেখি। ওর বাবার সাথে কথা বলে।
ওরা খুশী হয়ে যায়। তাহা বলে, আন্টি অবশ্যই যেতে দিতে হবে কিন্তু।
তাসনিমের মা রান্না করেন। দুপুরে ওরা চলে যেতে চায়। কিন্তু তাসনিমের মা আপত্তি জানান। অবশ্যই খেয়ে যেতে হবে। না খেয়ে গেলে রাগ করব।
খাওয়া শেষ হয়।
সবাই ব্যস্ত আলোচনায়। সেখানে গিয়ে কি কি করবে। দোলন বলে, অনা তুই খাতা কলম নিতে ভুলিস না। সুন্দর দৃশ্য দেখে কবিতা লিখে ফেলতে পারবি।
আচ্ছা তুই সব সময় আমার পিছে লাগিস কেন? অন্যদের চোখে পড়ে না তোর। অর্পা, তাহা, তাসনিম ওদেরকে কিছু বল। শুধু আমাকে বলিস ক্যান?
অনার এই কথা শুনে দোলন বলে তোর সাথে করি কারণ আছে তো। তুই একসময় নামকরা কবি হবি। দেশের সবাই তোকে চিনবে। আত্মজীবনী বিক্রী হবে হুরুস্থুল। তোর আত্মজীবনীতে আমিও থাকবো। তখন তো ঠিকই এসব দুষ্টামির কথা রঙ চঙ মাখিয়ে লিখবি। মধ্যখানে আমার লাভ আমার নাম বেশি থাকবে। ওরা তো আর বড় হয়ে কবি হচ্ছে না। এজন্য ওদের পিছনে লাগি না।
বলে হাসা শুরু করে। অন্যরাও হাসিতে যোগ দেয়। এমন কি অনাও হাসে।
হঠাৎ হাসি থামিয়ে দোলন হঠাৎ মনে পড়েছে এই ভঙ্গিতে বলে, তোদেরকে না জানিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।
তাসনিম জিজ্ঞেস করে, কি সিদ্ধান্ত? সিরিয়াস কিছু?
না। পিকনিকে আমরা সবাই একই রকম কাপড় পড়ে যাবো। আমরা পাঁচজন একই রঙের থ্রিপিস পড়বো।
তাহা বলে, হুর রে। খুব ভাল হবে। সুন্দর সিদ্ধান্ত নিয়েছিস তো। অন্যরাও বলে, হুম অনেক ভাল হবে। মজা হবে।
তাহা বলে, কি রঙের কাপড় পড়া হবে? এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে তো। সামনের মাসের ১ তারিখেই তো পিকনিক।
দোলন বলে, এটা নিয়ে চিন্তা করবি না। তোদের কে বলি নাই বিধায় মাইন্ড করিস না। আমি অলরেডি বানাতে দিয়ে দিয়েছি একই রঙের একই ডিজাইনের পাঁচটি থ্রিপিস। শনিবার দিন ডেলিভারি দেবে। পিকনিক উপলক্ষে আমার পক্ষ থেকে এই সামন্য উপহার।
তাসনিম বলে, তুই যেভাবে বলছিস, যেন সামনে রাজনীতিতে দাঁড়াবি। রাজনীতিবিদদের মত কথা।
-দাঁড়াতেও পারি। বিশ্বাস নাই।
বিকালের দিকে ওরা চলে যায়।
সন্ধ্যায় সময় চা দিতে আসেন তাসনিমের মা। মায়ের হাত থেকে চা নেয়।
-মা তুই ভুল বুঝিস না।
তাসনিম বুঝতে পারে পিকনিকের কথা বলা হচ্ছে। তাই বলে, তুমি ওদের কে সরাসরি বলে দিলেই পারতে। এখন ওরা আশা করে আছে আমি যাবো। সরাসরি মানা করলে না কেন?
শুন আমি তোর মনের ব্যাপারটা বুঝি। আমিও তো তোর সমান ছিলাম।
-মা আমার মাথা ব্যথা করছে। এখন কিছু বলো না তো। ভাল লাগছে।
তোর কি করম খারাপ লাগছে আমি বুঝতেছি। তারপরও কিছু কথা শুনতে হবে তোকে।
আমার যখন বিয়ে হয়েছে তখনও আমি কলেজের ছাত্রী। কলেজ থেকে পিকনিকে যাওয়া হবে। আমার বান্ধবীরা বলল আমাকেও অবশ্যই যেতে হবে। যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে সেহেতু কোথায় না কোথায় চলে যাবো।
কিন্তু তোর বাবা রাজি হন নাই। নতুন বউয়ের আব্দার ফেলানো পুরুষের পক্ষে অনেক কষ্টের। তারপরও আমাকে যেতে দেয় নি। তোর বাবা পিকনিক অনেক ভয় করে।
মা এগুলো আমাকে কেন শুনাচ্ছো। আমি যাচ্ছি না।
আসল কথাই তোকে বলি নাই। তোর বাবার অনেক ভাল বন্ধু ছিল ফরহাদ। একই সাথে প্রাইমারী স্কুল, হাইস্কুলে পড়ত। লেখাপড়া দুইজনে মিলে করত। ফরহাদের বাসাতেই তোর আব্বা বেশি থাকত। অনেকে মনে করত তোর বাবা বুঝি ফরহাদের পরিবারেরই সদস্য।
তো স্কুল থেকে পিকনিক গেল। সবাই অনেক মজা করছে। হিমছড়িতে ঠান্ডা পানিতে মনের সুখে গোসল করছে। কিন্তু ফেরার পথে গাড়িটা ব্রেক হারিয়ে পাশের খাদেই পড়ে যায়। ফরহাদ আর তোর বাবা পাশাপাশি বসেছিলেন। জানালার পাশে তোর বাবা। জানালা দিয়ে ছিটকে বাহিরে পড়ে যায়। কিন্তু গাড়িতে আগুন লেগে যাওয়ায় তোর বাবার বন্ধু বের হতে পারে নাই। সেখানেই মৃত্যু। এখনও মাঝে মাঝে তোর বাবা ফরহাদের গ্রামের বাড়িতে চলে যায়।
সে ঘটনার পর থেকে তোর বাবা পিকনিকের কথা শুনতেই পারেন না।
.....................
পিকনিকের নির্দিষ্ট দিনে সবাই আগে জানানো স্থানে উপস্থিত হয়েছে। পাঁচটা বড় বাস ঠিক করা হয়েছে। চারজন এখনো আসেনি। তাদের জন্য প্রতীক্ষা করছে একটা গাড়ি। এই গাড়ীর দায়িত্বে আছেন আকবর স্যার। তিনি বললেন, যারা আসে নি তাদের সাথে যোগাযোগ করো। জ্যামে পড়ছে নাকি?
ফোন দিয়ে জানা গেল, এই চারজন যাবে না। ওরা গাড়ী ছেড়ে দিতে বলল।
এক বান্ধবী যেতে পারছে না। তাই ওরাও গেল না। তাসনিম অনেক অনুরোধ করছে ওদের যাওয়ার জন্য। কিন্তু ওরা রাজি হয় নাই।